যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রসিদ্ধ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন দেশটির একটি আদালত। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরের ফেডারেল আদালত আজ শুক্রবার এই আদেশ দেন। এই আদেশ এসেছে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে করা এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারী’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করেছে, একক সিদ্ধান্তে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের উদ্যোগ বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৬ হাজার ৮০০ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৭ শতাংশের বেশি।
মামলার নথিতে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীরা হার্ভার্ডের বৈচিত্র্যময় শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণার পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। অথচ সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাক্ষেত্র ও বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এই সিদ্ধান্তের সূত্রপাত ঘটে যখন ট্রাম্প প্রশাসনের অধীন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেয় যে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবিদ্বেষ ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসনের অভিযোগে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি নাকি ভর্তি ও নিয়োগে পক্ষপাতদুষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করছে। যদিও হার্ভার্ড এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার এক চিঠিতে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বেআইনি, অগণতান্ত্রিক এবং একতরফা। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিই নষ্ট করবে না, বরং বিশ্বজুড়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।”
হোয়াইট হাউসের উপ-প্রেস সচিব অ্যাবিগালি জ্যাকসন এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “হার্ভার্ড যদি তাদের ক্যাম্পাসে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী, ইহুদিবিদ্বেষী এবং সন্ত্রাসবাদী উসকানিদাতাদের প্রতিহত করতে মনোযোগী হতো, তাহলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার বদলে তাদের উচিত নিজেদের ভিতরের সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেওয়া।”
এদিকে, মামলার প্রেক্ষিতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বারা ২৬৫ কোটি ডলারের তহবিল ছাঁটাইয়ের বিষয়টিও আদালতের সামনে তুলে ধরে। বলা হচ্ছে, এই আর্থিক চাপ এবং এখনকার ভর্তি নিষেধাজ্ঞা একই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি ধারাবাহিক আক্রমণ।
আদালতের এই অন্তর্বর্তীকালীন রায়ের ফলে আপাতত বিদেশি শিক্ষার্থীদের হার্ভার্ডে ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকছে না। তবে চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষার্থী উভয় পক্ষই রয়েছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। এদিকে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও বৈশ্বিক সহযোগিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষা, রাজনীতি ও মানবাধিকার—সবকিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা আজ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে।
Leave a comment