মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এবারের ১৬ ডিসেম্বর হোক জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এক ঐতিহাসিক উপলক্ষ। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়ন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের যে নবযাত্রা শুরু হয়েছে, তা যেকোনো মূল্যে রক্ষার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো বাণীতে তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ও গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে এই দিনে বাঙালি জাতি অর্জন করে কাঙ্ক্ষিত বিজয়। অসংখ্য ত্যাগ, সীমাহীন বেদনাবহ অভিজ্ঞতা এবং লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং লাল-সবুজের পতাকার অধিকার।
প্রধান উপদেষ্টা এ উপলক্ষে দেশে ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত সকল বাংলাদেশিকে বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধীনতার জন্য দীর্ঘ সংগ্রামে আত্মত্যাগকারী সকল বীর শহীদকে। তার ভাষায়, শহীদদের আত্মদান জাতিকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা জোগায় এবং সংকটময় মুহূর্তে মুক্তির পথ দেখায়।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতার নতুন সূর্য উদিত হয়েছিল, তা দুঃখজনকভাবে বিগত বছরগুলোতে বারবার স্বৈরাচার ও অপশাসনের কারণে ম্লান হয়েছে। তবে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতি আবারও একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বাস্তব সুযোগ পেয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি উন্নত, ন্যায়ভিত্তিক ও সুশাসিত বাংলাদেশের ভিত গড়ে তুলতে যে বিস্তৃত সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, তা বাস্তবায়নে জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের এই সংস্কার কার্যক্রম আজ ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে এবং একটি টেকসই ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্রব্যবস্থার দিকে দেশ অগ্রসর হচ্ছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, এসব সংস্কারের মধ্য দিয়ে আগামীর বাংলাদেশে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চূড়ান্তভাবে বিলুপ্ত হবে, প্রতিষ্ঠিত হবে ন্যায়বিচার। একই সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি জনমুখী ও টেকসই উন্নয়নের পথ সুগম হবে।
বাণীর শেষাংশে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিতে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। ধর্ম, বর্ণ ও গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাইকে হাতে হাত রেখে শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানবিক মর্যাদাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তার মতে, মহান বিজয় দিবস কেবল অতীতের গৌরব স্মরণের দিন নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের বাংলাদেশ নির্মাণে নতুন করে শপথ নেওয়ার দিন—যেখানে স্বাধীনতার চেতনা, গণতন্ত্র ও মানবিক মূল্যবোধই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি।
Leave a comment