মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জনসমাগমস্থল এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য সব ধরনের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে এই বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
র্যাব সদর দপ্তরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনসহ রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় র্যাবের দৃশ্যমান উপস্থিতি ও টহল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বিজয় দিবস-২০২৫ কে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে লক্ষ্যে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মূল্যায়নের মাধ্যমে বিজয় দিবসের নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে কাজ করছে র্যাব।
র্যাব জানায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে জারিকৃত সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে র্যাব ফোর্সেস সক্রিয় রয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকেই ব্যাটালিয়নের আওতাধীন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যু ও আশপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি এবং নিরাপত্তা টহল উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। এই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর আশপাশে পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ও ইউনিফর্মধারী টহল জোরদার করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আধুনিক অপরাধ ও অনলাইনভিত্তিক হুমকি মোকাবিলায় র্যাবের সাইবার মনিটরিং টিমও সক্রিয় থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে কেউ যেন কোনো ধরনের ব্যাগ, বস্তা বা কার্টন জাতীয় দ্রব্য বহন বা সংরক্ষণ করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা সংগঠনের কার্যক্রম শনাক্তে বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রয়োজনীয় অভিযান পরিচালনা করা হবে। একই সঙ্গে কিশোর গ্যাং সংশ্লিষ্ট অপরাধ ও সংঘাত এড়াতে তাদের গতিবিধির ওপর বাড়তি নজরদারি রাখা হয়েছে।
র্যাব জানায়, বিজয় দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ভিভিআইপি ও ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ, পাশাপাশি বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের চলাচল বৃদ্ধি পায়। এ কারণে তাদের গমনা গমনস্থল এবং জনসমাগম হওয়ার সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।
শহরের প্রবেশ ও বাহির পথসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করে নিয়মিত তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যেসব এলাকায় জনসমাগম বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সন্ত্রাসী ও অপরাধীরা যেন বস্তি, হোটেল, গেস্ট হাউস বা রেস্ট হাউজে অবস্থান করে কোনো ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিকল্পনা করতে না পারে, সে লক্ষ্যে র্যাব নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সব বস্তি, হোটেল, রেস্ট হাউজ, নগরীর উপকণ্ঠে গড়ে ওঠা নতুন আবাসিক এলাকা এবং চিহ্নিত ক্রাইম জোনগুলোতে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে।
যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক তৎপরতা বা বোমা হামলার আশঙ্কা মোকাবিলায় র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডকে কৌশলগত স্থানে সার্বক্ষণিকভাবে মোতায়েন রাখা হয়েছে। আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে সম্ভাব্য সহিংসতা রোধে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আগত নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো নারী যেন ইভটিজিং, যৌন হয়রানি বা সম্মানহানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং সেগুলোর আশপাশের এলাকাতেও সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মে র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে, যাতে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
সমন্বিত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যাটালিয়নগুলো নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে। পাশাপাশি র্যাব সদর দপ্তরে স্থাপিত কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে ঢাকাসহ সারাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে। প্রয়োজনে নাগরিকরা র্যাব সদর দপ্তরের হটলাইন নম্বর ০১৭৭৭৭২০০২৯-এ যোগাযোগ করতে পারবেন।
র্যাব কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেন, এই সমন্বিত ও বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস সারাদেশে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হবে।
Leave a comment