ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটকে আজ শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের বিরুদ্ধে অবস্থানসহ কয়েকটি দাবিতে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে দুটি ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা একটি সুপরিকল্পিত ও অগণতান্ত্রিক আক্রমণ। এ ঘটনায় সরকারের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, “এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিষ্কার, প্রশাসনে এখনো স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা রয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “জুলাই মাসের গণ–অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ছিল দুর্নীতি ও চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। কিন্তু বাস্তবে মোড়ে মোড়ে, বাস-লঞ্চ টার্মিনালসহ নানা স্থানে এখনো চাঁদাবাজি চলছে। আগের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি বরং আরও অবনতি হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
এ সময় তিনি প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মৌলিক সংস্কার ছাড়া দেশের কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করা সম্ভব নয়। আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ।”
বক্তব্যে উঠে আসে আন্তর্জাতিক ইস্যুও। ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় খোলার অনুমতির বিষয়ে সমালোচনা করে ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের নেতারা বলেন, দেশের স্বার্থবিরোধী এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সরকারকে বাধা দেওয়া হবে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর না হলে জনগণ নিজেদের পথ বেছে নিতে বাধ্য হবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের অফিস খুললে তা দেশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।”
বক্তারা গোপালগঞ্জের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নতুন করে গণআন্দোলনের হুমকিও দেন। জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, “বাংলাদেশের কোনো প্রান্তে স্বৈরাচারের দোসরদের দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। আমরা সতর্ক, প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করব।”
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ইসলামী যুব আন্দোলনের সহকারী সেক্রেটারি ইলিয়াস আহসান, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সভাপতি আবুল কাশেম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম ও দক্ষিণের সভাপতি মুহাম্মদ ইমতিয়াজ। খেলাফত মজলিসের পক্ষে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হক মুসা, যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন ও ফয়সাল আহমদ বক্তব্য দেন। এতে খেলাফত যুব মজলিস, শ্রমিক মজলিস ও ছাত্র মজলিসের সদস্যরাও অংশ নেয়।
সমাবেশ শেষে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করার চেষ্টা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক তা ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোনো অনুমতি ছাড়া জনসমাগম বা শোভাযাত্রা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সন্ধ্যার দিকে মসজিদ এলাকা থেকে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অধিকাংশ নেতাকর্মী শান্তিপূর্ণভাবে সরে যান। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনা এখনো থেমে নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Leave a comment