বলিউড অভিনেতা কমল সদানার জীবন যেন সিনেমার চিত্রনাট্যকে হার মানানো এক বাস্তবতা। রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে ১৯৯২ সালে কাজলের বিপরীতে ‘বেখুদি’ ছবির মাধ্যমে। কিন্তু এই উত্থানের মাত্র দুই বছর আগেই, নিজের ২০তম জন্মদিনে সাক্ষী হয়েছিলেন এক হৃদয়বিদারক ঘটনার—বাবার গুলিতে নিহত হন তাঁর মা ও বোন। গুলি লাগে তাঁর নিজের গলাতেও। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান কেবল তিনি।
ঘটনাটি ঘটে ১৯৯০ সালে। কমলের বাবা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হঠাৎই গুলিচালনা শুরু করেন পরিবারের ওপর। প্রথমে প্রাণ হারান তাঁর স্ত্রী ও কন্যা। এরপর ছেলের ওপরও গুলি চালান তিনি। গলা ভেদ করে গুলি বেরিয়ে গেলেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ স্পর্শ না করায় প্রাণে বেঁচে যান কমল। পরে তাঁর বাবা নিজেও আত্মহত্যা করেন।
এক সাক্ষাৎকারে সেই বিভীষিকাময় রাতের স্মৃতি তুলে ধরে কমল বলেন, “আমি যখন মা আর বোনকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখনো বুঝিনি যে আমিও গুলিবিদ্ধ হয়েছি। আমার শার্টে রক্ত দেখে ডাক্তার প্রথম বুঝতে পারেন।” পরে স্ক্যান করে দেখা যায়, গুলি তাঁর গলার পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে, কিন্তু কোনো স্নায়ু বা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
অস্ত্রোপচারের পর যখন তিনি বাড়ি ফেরেন, তখনও ঘরের ভেতরে পড়ে ছিল পরিবারের মৃতদেহগুলো। অথচ আজও তিনি সেই বাড়িতেই বাস করছেন। নিজের এই বেঁচে যাওয়াকে অলৌকিক বলেই মনে করেন কমল। তাঁর ভাষায়, “আমি বিশ্বাস করি, এটা এমনি এমনি হয়নি—হয়তো আমাকে কিছু করার জন্যই বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।”
তবে এমন নির্মম ঘটনার পরও তিনি বাবা বা পরিবারের কারও প্রতি ঘৃণা রাখেননি। বরং তিনি মনে করেন, “একটি দুঃখজনক ঘটনাই পুরো পরিবারকে খারাপ মানুষ বানায় না। আমার বাবা খারাপ ছিলেন না। আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষতবিক্ষত ছিলাম।”
কমল সদানার সেই দুঃসহ অতীত তাঁকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। ঘটনার দুই বছর পরই সিনেমায় অভিষেক ঘটে তাঁর। নব্বইয়ের দশকে একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পাশাপাশি তিনি পরে পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেন। তাঁর পরিচালনায় মুক্তি পায় ‘রোর: টাইগার্স অব দ্য সুন্দরবনস’ ও ‘ভিক্টোরিয়া নম্বর ২০৩’ নামের সিনেমা।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
Leave a comment