রাজধানীর বাড্ডার আফতাবনগরে গ্যাস লিকেজ থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে আরও এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সাত বছর বয়সী মিথিলা আক্তার শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেলের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। এর মধ্য দিয়ে এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় একই পরিবারের চার সদস্য প্রাণ হারালেন। হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে পরিবারের একমাত্র জীবিত শিশু সদস্য, চার বছর বয়সী তানিসা।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানিয়েছেন, মিথিলার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ অংশ পুড়ে গিয়েছিল। এতটাই গুরুতর ছিল তার অবস্থা যে উন্নত চিকিৎসা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
গত ১৬ মে রাতে বাড্ডার আফতাবনগরের আনন্দ নগর এলাকার একটি নিচতলার ফ্ল্যাটে ঘটে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ওই বাসায় গ্যাসের লিকেজ থেকে ধীরে ধীরে ঘরে গ্যাস জমে ওঠে। বাসার কেউ বিষয়টি টের না পেয়ে রান্নার চুলা জ্বালাতে গেলে মুহূর্তেই ঘটে বিস্ফোরণ। আগুনে পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। ঘরে থাকা পরিবারের পাঁচজনই এতে দগ্ধ হন।
দগ্ধদের মধ্যে প্রথমে মারা যায় পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, চার বছর বয়সী তানজিলা। রোববার বিকেল তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান মা, মানসুরা বেগম। তাঁর শরীরের ৬৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। বুধবার ভোরে মৃত্যুবরণ করেন পরিবারের কর্তা তোফাজ্জল হোসাইন। তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য তানিসা। তার অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন যে চিকিৎসকেরা এখনো আশাবাদী হতে পারছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বাসায় গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কিংবা লিকেজ কোথায় সেটি নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রান্নাঘরে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল না থাকলে গ্যাস জমে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, যা এ ঘটনায় প্রতিফলিত হয়েছে।
একটি পরিবারের প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এ ঘটনাটি এলাকায় গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় এখনো তদন্ত শুরু করেনি বলে জানা গেছে। তবে এলাকাবাসী দ্রুত গ্যাস লাইন পরীক্ষার দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা এড়ানো যায়।
Leave a comment