বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, তাদের সম্পত্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।”
রণধীর জয়সওয়াল জানান, বাংলাদেশে গুরুতর অপরাধের জন্য দণ্ডিত চরমপন্থীদের মুক্তির ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এবং এটি ভারত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশ একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠুক, যেখানে গণতান্ত্রিক উপায়ে ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে।”
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ২,৩৭৪টি নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে পুলিশ ১,২৫৪টি শনাক্ত করেছে।
জয়সওয়াল দাবি করেন, এই যাচাইকৃত ঘটনার ৯৮% রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে, যা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
তিনি বলেন, “আমরা আশা করি বাংলাদেশ সরকার দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করবে এবং হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনবে।”
বাংলাদেশ-ভারতের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়েও জয়সওয়াল বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, ৬ মার্চ কলকাতায় যৌথ কমিটির ৮৬তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি বছরে তিনবার নিয়মিতভাবে আয়োজিত হয় এবং ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য গঠিত কাঠামোগত ব্যবস্থার অংশ।
তিনি বলেন, “বৈঠকে উভয় দেশ গঙ্গার পানিবণ্টন, পানিপ্রবাহ পরিমাপ এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে।”
জয়সওয়াল আরও বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য উন্নয়ন সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও স্থানীয় কিছু সমস্যার কারণে বেশ কিছু প্রকল্পের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”
ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সংকটের সমাধান চায়। পাশাপাশি, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের মাধ্যমে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি মনোযোগী হচ্ছে।
এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ সরকার এই উদ্বেগকে কতটা গুরুত্ব দেয় এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
Leave a comment