বাংলাদেশ সরকারের ঋণের পরিমাণ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে ২০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ৮ হাজার ৪৪৪ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা টাকার হিসাবে প্রায় ১০ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। বাকি অংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ। রাজস্ব আয়ের তুলনায় ক্রমবর্ধমান ঋণের এই চিত্র অর্থনীতিবিদদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজস্ব আদায়ের নিম্নহার এবং রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না থাকায় সরকারের ঋণনির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে। গত অর্থবছরের শেষে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ১০ লাখ ২০ হাজার ২০৫ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণ ছিল ৮ লাখ ১২ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। শেখ হাসিনার শাসনামলে বাজেটের আকার ক্রমাগত বেড়েছে, তবে রাজস্ব আহরণ ততটা বাড়েনি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে ভবিষ্যতে তা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ না করলে ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও জটিল হতে পারে।
বর্তমান ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ বছরের শেষে সরকারকে ঋণের আসল ও সুদ বাবদ ৪ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক আয়ের তুলনায় বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৯৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৪৬ শতাংশে পৌঁছেছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। রাজস্ব আয়ের তুলনায় অভ্যন্তরীণ ঋণ ২৭৬ শতাংশ, যা দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী ও ড. জাহিদ হোসেনের মতে, ঋণ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। উৎপাদনশীল খাতে ঋণের অর্থ বিনিয়োগ করতে না পারলে ঋণের ভার পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বাংলাদেশের ঋণ সমস্যা শুধু জিডিপির অনুপাতের নিরিখে বিবেচনা করলে সম্পূর্ণ বোঝা যাবে না। রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি, বৈদেশিক আয়ের স্থিতিশীল প্রবাহ, এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলেই এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ঋণের চাপ সামাল দিতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
Leave a comment