Home ইতিহাসের পাতা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা
ইতিহাসের পাতা

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা

Share
Share

নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা (১৮ জুলাই ১৯১৮–৫ ডিসেম্বর ২০১৩) ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি এবং বিশ্বজুড়ে শান্তি-বিনির্মাণে অগ্রণী নেতা। কারাবাস ও নির্যাতনের পরও তাঁর অটল মনোবল এবং অহিংস আন্দোলনের কৌশল বিশ্ববাসীর কাছে অসামান্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাড়িয়েছে।

ম্যান্ডেলা দরিদ্র ও ফোঁটান অঞ্চলে রাজকীয় বংশের শেষে জন্মগ্রহণ করলেও তাঁর পিতা ছিলেন ম্‌ভেজোর একজন নামী-দামী নেতা। সাড়ে সাত বছর বয়সে ইংরেজি নাম ‘নেলসন’ নিয়ে তিনি মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। ফোর্ট হেয়ার, ভিটভাটারস্র্যান্ট ও ইউনিভার্সিটি অব সাউথ আফ্রিকা থেকে আইন অনার্স পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন, এবং ঝালময় রাজনীতি ও সামাজিক আন্দোলনে অংশ নেন।

১৯৪৩ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তিনি রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। যুব সংগঠন এনসিসিইউ এর কর্মীবাহিনী গড়ে তোলায় যার মুখ্য অবদান ছিল। ১৯৫২ সালের ‘আহিংসা আন্দোলন’-এর সময় তাঁর নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব উজ্জ্বলভাবে উদ্ভাসিত হয়। ১৯৫৬ সালে ১৫০ নেতার সঙ্গে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত হন। ১৯৬১ সালে ‘উমখান্তো উই সিযওয়ে’ প্রতিষ্ঠা করে ম্যান্ডেলা বোঝালেন অহিংস আন্দোলন এক পর্যায়ে যথেষ্ট নয়, বরং সশস্ত্র প্রতিরোধ জরুরি।

১৯৬২ সালে সেদেশে ফেরারি অবস্থায় থাকা অবস্থায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরবর্তীতে প্রিটোরিয়া ট্রাইলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ অগণন বছর কাটান রবেন দ্বীপ ও পলসমুর কারাগারে। رغم সব নিষ্ঠুরতা, ম্যান্ডেলা বিশ্ববাসীর জন্য হয়ে ওঠেন মুক্তির আশা। ‘Free Nelson Mandela!’ শ্লোগান বিশ্বজুড়ে রূপ পেল।

১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্তি লাভ করেন। এরপর শান্তিচুক্তির মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে ১৯৯৪ সালের প্রথম বর্ণনির্বাচনে বিজয় অর্জন করে দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবাদকে বিদায় জানিয়ে গণতন্ত্রের পথে পা রাখে। ১৯৯৩ সালে ম্যান্ডেলা ও রাষ্ট্রপতি FW de Klerk যুগলভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।

রাষ্ট্রপতিত্বকালে ম্যান্ডেলা বর্ণবাদবিরোধী সত্য–সুক্ষ্মতা কমিশন গঠন করেন, সংবিধান ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৯ সালে অবসর নিলেও শান্তিচুক্তি ও সামাজিক রূপান্তরে পথ দেখিয়ে গেলেন। বৈবাহিক জীবনে তিনবার বিবাহ ও ছয় সন্তান থাকলেও, তাঁর আদর্শ ও কর্মযজ্ঞই বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করে।

বর্ণবাদবিরোধী আদর্শ, কারাবাসে অটল মনোবল ও শান্তির পথে নেতৃত্ব—এগুলো ম্যান্ডেলার বৈশিষ্ট্য। তার ব্যক্তি জীবন থেকে মানবতাবাদী সংগ্রামের গল্প, রাজনৈতিক দর্শন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের কাহিনি, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বিশ্ব সমাজের অম্লান চিত্র এবং ইতিহাসকে উজ্জীবিত করে রাখে। শান্তির প্রতীক, সংগ্রামীপন্থার পথিকৃৎ—নেলসন ম্যান্ডেলার জীবন আজও মানবজাতির জন্য দিওর্ণ থিমার, প্রেরণার আদর্শ।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

আজ এনসিপির বিক্ষোভ

বুধবার বিকালে গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে দলটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে । এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ...

‘সুপারম্যান’ সিনেমায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ইঙ্গিত?

বিশ্বজুড়ে বক্স অফিসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে জেমস গান পরিচালিত ডিসি কমিকসভিত্তিক নতুন সিনেমা ‘সুপারম্যান’। তবে ছবির গল্প ও দৃশ্যায়ন ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন...

Related Articles

বই, বিদ্যা আর ব্যারিকেড— বাংলার বাঙালির জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা কলেজ

ঢাকা শহরের হৃদপিণ্ড ধানমন্ডির ব্যস্ত মিরপুর রোডে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের এক নীরব...

মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিন্ধু বিজয় করেছিলেন যে সেনাপতি

মুহাম্মাদ বিন কাসিম আস সাকাফি ছিলেন উমাইয়া খিলাফতের অন্যতম প্রতিভাবান ও সাহসী...

শুক্রবার ও শনিবারকে সরকারি ছুটি ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের

১৯৯৭ সালের ৩০ মে, এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সরকারি...

জিয়াউর রহমান: এক সামরিক কর্মকর্তা থেকে রাষ্ট্রনায়কের উত্থান 

ঢাকা, ৩০ মে ২০২৫: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম জিয়াউর রহমান,...