রংপুরের বদরগঞ্জে একটি দোকান ভাড়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই ছুরিকাঘাতে গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার দুপুরে শহীদ মিনার চত্বরে এ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চিত্র দেখা যায়।
নিহত ব্যক্তি লাভলু মিয়া (৫০) বদরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা এবং স্থানীয় বিএনপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হলে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর ছেলে রায়হান আলী বাবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
ঘটনার সূত্রপাত বদরগঞ্জ বাজারের শহীদ মিনার এলাকার একটি টিনের দোকান ঘিরে। ব্যবসায়ী জাহিদুল হক দোকানটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইসতিয়াক হোসেনের কাছ থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত ভাড়া নেওয়ার চুক্তি করেছেন বলে দাবি করেন। তবে ইসতিয়াক হোসেন দোকান ছাড়ার জন্য তাঁকে চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ।
বুধবার সন্ধ্যায় ইসতিয়াকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী জাহিদুলের দোকানে হামলা করে বলে জানান জাহিদুল। এতে তিনি ছুরিকাহত হন।
এই ঘটনার পর থেকেই স্থানীয় বিএনপির কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হন। জাহিদুল হকের পক্ষে অবস্থান নেন ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল হক ও ব্যবসায়ী নেতা সারোয়ার জাহান। বিপরীতে ইসতিয়াকের পক্ষে ছিলেন সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবীর।
শনিবার দুপুরে জাহিদুল হকের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে মানববন্ধনের প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে বিপক্ষের শতাধিক লোক দেশি অস্ত্রসহ সেখানে হাজির হয়ে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং হামলা চালায়। শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ, যা চলে দুপুর একটা পর্যন্ত।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শাকির মুবাশ্বির জানান, আহত ১৫ জনের মধ্যে নয়জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের প্রত্যেকের শরীর ও মাথায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
সংঘর্ষের সময় ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমানের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। গাড়ির ভেতরে থাকা তাঁর শিশুকন্যা মাহরিন (৮) আহত হয়। এ ছাড়া আরও তিনটি প্রাইভেটকার ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মেহেদী জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার দাবি করেন, তাঁর ঘনিষ্ঠজন লাভলুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে শহিদুল হক ও হুমায়ুন কবীর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষকে দায়ী করেন। তাঁরা দাবি করেন, শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে প্রতিপক্ষ হামলা চালিয়েছে।
বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, “একটি দোকানকে কেন্দ্র করেই মূল সংঘর্ষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বদরগঞ্জের এ সংঘর্ষ স্থানীয় রাজনীতিতে বিদ্যমান বিভাজন, দলীয় প্রভাব ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সংঘাতের বহিঃপ্রকাশ। এক দোকান ঘিরে এমন প্রাণঘাতী রক্তপাত স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
Leave a comment