বক্সিং ইতিহাসের অন্যতম সেরা হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন জর্জ ফোরম্যান আর নেই।
তার পরিবার শনিবার (২২ মার্চ) ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই খবর নিশ্চিত করেছে।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর ।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “আমাদের হৃদয় আজ বেদনায় ভারাক্রান্ত। গভীর শোকের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের প্রিয় জর্জ এডওয়ার্ড ফোরম্যান শান্তিপূর্ণভাবে তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি ছিলেন এক নিবেদিত যাজক, এক দয়ালু স্বামী, একজন প্রিয় বাবা, এবং এক গর্বিত দাদা ও প্রপিতামহ। ।”
জর্জ ফোরম্যান ১৯৪৯ সালের ১০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের মার্শাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় ভাইবোনের সঙ্গে কষ্টকর শৈশব কাটানো এই মানুষটি এক সময়ের রুক্ষ বাস্তবতাকে জয় করে কিংবদন্তির আসনে বসেন।
তরুণ বয়সেই বক্সিংয়ে প্রবেশ করেন এবং অসাধারণ প্রতিভার কারণে দ্রুতই সবার নজর কাড়েন। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৬৮ মেক্সিকো অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতে নিজের দক্ষতার জানান দেন। এরপর তার পেশাদার বক্সিং যাত্রা শুরু হয়, যেখানে তিনি একের পর এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন।
১৯৭৩ সালে জ্যামাইকার কিংস্টনে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন জো ফ্রেজিয়ারকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো হেভিওয়েট বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খেতাব অর্জন করেন ফোরম্যান। সেই সময় তিনি ছিলেন অপরাজেয় এক শক্তি, যার আক্রমণাত্মক বক্সিং স্টাইল প্রতিপক্ষকে কাবু করে ফেলত।
তবে বক্সিং ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত লড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর। কঙ্গোর কিনসাসায় ‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামে বিখ্যাত এই লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই কিংবদন্তি—মোহাম্মদ আলী এবং জর্জ ফোরম্যান। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি দর্শকের সামনে আলী ‘রোপ-আ-ডোপ’ কৌশল ব্যবহার করে ফোরম্যানকে পরাজিত করেন। এই লড়াই বক্সিং ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
১৯৭৭ সালে বক্সিং থেকে অবসর নেন ফোরম্যান। তবে ১৯৯৪ সালে, ৪৫ বছর বয়সে তিনি আবার রিংয়ে ফিরে আসেন এবং অভূতপূর্বভাবে দ্বিতীয়বারের মতো হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন।
বক্সিং ছাড়াও জর্জ ফোরম্যান ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তার ‘জর্জ ফোরম্যান গ্রিল’ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পায় এবং কয়েক মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়। এছাড়াও তিনি ধর্মীয় কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং একজন যাজক হিসেবে বহু বছর মানুষের সেবা করেছেন।
জর্জ ফোরম্যান তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে মোট ৮১টি পেশাদার ম্যাচ খেলেছেন, যার মধ্যে ৭৬টিতে বিজয়ী হয়েছেন। তার ৬৮টি জয় এসেছে নকআউটের মাধ্যমে, যা তার শক্তিশালী ঘুষির প্রমাণ। মোহাম্মদ আলীর তুলনায় নকআউটের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ ছিল তার।
বক্সিং ইতিহাসে জর্জ ফোরম্যানের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার শক্তি, অধ্যবসায় এবং বিজয়ী মানসিকতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বক্সারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। তার চলে যাওয়া ক্রীড়া দুনিয়ার এক বড় শূন্যতা সৃষ্টি করল, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
Leave a comment