Home আন্তর্জাতিক ফোন কলে পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিরতি চাইলো ভারত
আন্তর্জাতিক

ফোন কলে পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধবিরতি চাইলো ভারত

Share
Share

দীর্ঘ উত্তেজনা, পাল্টাপাল্টি হামলা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পর অবশেষে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। শনিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, আজ বিকেলে পাকিস্তানের সামরিক অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক ভারতের তাঁর সমমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করেন। সেখানে দুই পক্ষ সম্মত হয়, ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক অভিযান ও গোলাগুলি বন্ধ থাকবে।

ভারতের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “উভয় দেশই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সম্মত হয়েছি যে, সীমান্ত অঞ্চলে আগ্রাসী মনোভাব পরিহার করা হবে এবং এ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়েছে।”

বিক্রম মিশ্রি আরও জানান, যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য উভয় দেশের সামরিক বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সেনা মোতায়েন ও নজরদারি বজায় থাকলেও নতুন করে কোনো অভিযান বা গোলাগুলি চালানো হবে না।

ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। একাধিক পর্যবেক্ষকের মতে, এই পদক্ষেপ দুই প্রতিবেশীর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথ সুগম করতে পারে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি, ড্রোন হামলা ও অনুপ্রবেশ নিয়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। নিহত হয়েছিলেন উভয় দেশের সামরিক সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক। আন্তর্জাতিক মহলও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

জাতিসংঘ, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক চ্যানেলে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানানো হচ্ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই চাপও দুই দেশকে আলোচনায় বসতে ও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে বাধ্য করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তান একাধিকবার মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয় এবং ভারতও তা বিবেচনায় নেয়। গত কয়েক দিনে নেপথ্যে একাধিক গোপন বার্তা চালাচালি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদি হলে তা শুধু সীমান্তে নয়, পুরো উপমহাদেশে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা বাড়াবে।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শ্রুতি মেহতা বলেন, “যুদ্ধবিরতি শুধু গোলাগুলি বন্ধ করা নয়, বরং কূটনৈতিক দ্বার খুলে দেওয়া। এই মুহূর্তে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছাই গুরুত্বপূর্ণ।”

এদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক যৌথ বিবৃতিতে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেছে। তারা একে “পৃথিবীর জন্য ইতিবাচক বার্তা” বলে উল্লেখ করেছে।

উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান সর্বশেষ ২০০৩ সালে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল। তবে তা প্রায়ই লঙ্ঘিত হয়েছে। এবার কতদিন এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

স্বৈরাচারের দোসরদের পালাতে সুযোগ দিচ্ছে সরকার: তারেক রহমান

সরকারের চলমান সংস্কারের নামে সময় ক্ষেপণের মধ্য দিয়ে পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের দেশত্যাগে সহায়তা করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি...

সুন্দরবনে ৭৮ জনকে অবৈধ অনুপ্রবেশ করালো বিএসএফ

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) শুক্রবার ভোরে বাংলাদেশের সুন্দরবনসংলগ্ন মান্দারবাড়িয়া চরে স্পিডবোটে করে এসে ৭৮ জন মানুষকে রেখে চলে যায় বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।...

Related Articles

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বিমান হামলায় শেষ ২৪ ঘণ্টায়...

আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা: আধ্যাত্মিক জাগরণের মহিমান্বিত দিন

আজ রোববার, শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা।   দিনটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই...

ভারত থামলে আমরাও থামাব ‘বুনইয়ান-উন-মারসুস’, বললেন ইসহাক দার

ভারতের সামরিক অভিযানের জবাবে পাকিস্তানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যেই আশার আলো দেখালেন...

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে চীনের আধিপত্য বিস্তার

কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা চীনের জন্য...