গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে নয়, জানুয়ারিতেই দিতে হবে। সময়মতো নির্বাচন আয়োজন না হলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও অস্থিরতা ফিরে আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নয়—জানুয়ারিতেই নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচন যত দ্রুত অনুষ্ঠিত হবে, দেশের জন্য তত ভালো হবে। সময়ক্ষেপণ কেবল রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়াবে, যা জনগণের জন্যও ক্ষতিকর।”
নুর বলেন, “নির্বাচন সংঘাতমুখর হবে নাকি শান্তিপূর্ণ—তা নির্ভর করবে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নয়, বরং রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণের ওপরও। আমরা চাই নির্বাচন হোক অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ‘বিভিন্ন ষড়যন্ত্র’ চলছে। “যদি সময়মতো নির্বাচন না হয়, তাহলে রাজনীতির আকাশে আবারো কালো মেঘ জমে যেতে পারে।
গণঅধিকার পরিষদ সভাপতির দাবি, জনগণ এখন পরিবর্তন চায় এবং সেই পরিবর্তনের সূচনা আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমেই হতে হবে। “জনগণ ভোট দিতে চায়, সিদ্ধান্ত নিতে চায়। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা যাবে না,”—বলেন তিনি। গণঅধিকার পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর। তবে এর ভিত্তি গড়ে ওঠে ২০১৮ সালের আলোচিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, যেখানে নুরুল হক নুর নেতৃত্ব দেন ।
দলটি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার এবং জাতীয় স্বার্থ—এই চার মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠার দিনই তারা ২১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সুশাসন, প্রশাসনিক জবাবদিহি, এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা। তাদের মূল স্লোগান: “জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার।”
নুরুল হক নুর দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি প্রতীকী নাম হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের সময় তার নেতৃত্ব ও সাহসিকতা নতুন এক রাজনৈতিক ধারা তৈরি করে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে গণঅধিকার পরিষদ, যা এখন জাতীয় রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নুরুল হক নুরের এই মন্তব্য বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্লেষক ও রাজনীতি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের অবস্থান ও বিরোধী দলের কৌশল—দুটির মধ্যকার ভারসাম্যই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “নুরের বক্তব্য তরুণ সমাজের ভাবনা প্রতিফলিত করে। নির্বাচনের সময় নিয়ে এই মুহূর্তে স্পষ্টতা না থাকায় তার মন্তব্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।” আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা বাড়ছে। বড় দলগুলোর অবস্থান ও আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে জল্পনা বাড়লেও, নির্বাচন কমিশন এখনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি।
Leave a comment