১৭৯২ সালের ২৫ এপ্রিল, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইতিহাসের এক ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হয়। ওই দিনই প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে গিলোটিন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ফরাসি বিপ্লবের রক্তাক্ত রূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই যন্ত্রটি পরে হয়ে ওঠে মৃত্যুদণ্ডের প্রতীক, যা শুধু অপরাধ দমন নয়, বরং রাজনৈতিক শক্তির প্রদর্শন ও বিপ্লবী আতঙ্কের অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছিল।
ফরাসি চিকিৎসক জোসেফ-ইগনাস গিলোটিনের নামে নামকরণ হওয়া এই যন্ত্রটি উদ্ভাবনের উদ্দেশ্য ছিল, মৃত্যুদণ্ডকে দ্রুত, কম যন্ত্রণাদায়ক এবং সকল শ্রেণির মানুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য করে তোলা। গিলোটিন নিজে অবশ্য কখনো এই নির্মম যন্ত্র ব্যবহারের প্রবক্তা ছিলেন না, বরং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই এর ধারণা দেন।
১৭৯২ সালের সেই দিনে প্রথম গিলোটিনের ব্যবহারে প্রাণ হারান চোর হিসেবে দণ্ডিত এক ব্যক্তি। এর পর থেকেই ফ্রান্সজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই মৃত্যুযন্ত্র। ফরাসি বিপ্লবের সময়কালে, বিশেষ করে রেইন অব টেরর বা ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ পর্বে, বিপুল সংখ্যক মানুষ—রাজপরিবারের সদস্য, বিপ্লবী, সাধারণ নাগরিক—এই যন্ত্রের মাধ্যমে প্রাণ হারায়। সর্বাধিক আলোচিত হয় রানি মারি অঁতোয়ানেত এবং রাজা ষোড়শ লুইয়ের শিরচ্ছেদের ঘটনা।
গিলোটিন শুধু একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের যন্ত্র ছিল না, বরং এটি হয়ে ওঠে ফ্রান্সের রাজনৈতিক রূপান্তরের প্রতীক। এতে প্রকাশ পায় বিপ্লবের বীভৎসতা, জনগণের ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা এবং শাসনব্যবস্থার বিপর্যয়।
১৯৮১ সালে ফ্রান্সে মৃত্যুদণ্ড আইনতভাবে বাতিল হওয়ার আগপর্যন্ত গিলোটিন ব্যবহার চলেছিল। তবে ১৭৯২ সালের ২৫ এপ্রিলের সেই দিনটি ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছে—একদিকে প্রযুক্তিগত ন্যায্যতা ও সমতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা, অন্যদিকে ভয় ও দমননীতির এক ভয়াবহ অস্ত্র হিসেবে।
Leave a comment