ঢাকা থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জগামী একটি যাত্রীবাহী এসি বাসে তীব্র গরম ও অব্যবস্থাপনার কারণে হিটস্ট্রোকে এক বৃদ্ধ যাত্রী মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বাসটির এসি নষ্ট থাকলেও তা মেরামতের চেষ্টা তো দূরের কথা, কর্তৃপক্ষ যাত্রীদেরজন্য কোনো সহায়তা বা বিকল্প ব্যবস্থাও নেয়নি বাস।
এই ঘটনার বিবরণ কাজী মিনহা ইসলাম নামের এক যাত্রীর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেউঠে এসেছে, যা ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। তিনি লেখেন, জনপ্রতি ১৪০০ টাকা দিয়ে যাত্রীরা এসি বাসের টিকিট কাটেন। কিন্তু বাস চলার শুরু থেকেই এসি নষ্ট ছিল। বাসে কোনো জানালা খোলার সুযোগ না থাকায় ভিতরে তাপমাত্রা দ্রুত অসহনীয় হয়ে ওঠে। যাত্রীরা বারবার স্টাফদের অনুরোধ করেন এসি চালু করার বা রিফান্ড দেওয়ার জন্য, কিন্তু তাদের কোনো সাড়া মেলেনি।
ঘটনা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন বাসটি পদ্মা নদী পার হওয়ার সময় ফেরিতে ওঠে এবং ইঞ্জিন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় যাত্রীরা তীব্র রোদের মধ্যে, গরমের ভিতরে বন্দি অবস্থায় থাকতে বাধ্য হন। স্টাফদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা বা বিকল্প ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। মিনহা লিখেছেন,ইঞ্জিন ঠিক হওয়ার পর আবার বাস চলতে শুরু করে, কিন্তু ভিতরের গরম তখন ‘চুল্লির মতো’, ।
ফেরি পার হওয়ার পর সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। একজন প্রায় ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ যাত্রী হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারান এবং সিটে মল ত্যাগ করেন। তিনি তখনো সচেতন ছিলেন এবং বারবার সুপারভাইজারকে অনুরোধ করছিলেন এসি চালানোর জন্য। কিন্তু ততক্ষণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।
যাত্রীরা তখন বাসের ছাদ খোলার চেষ্টা করেন কিছু বাতাস ঢোকানোর জন্য। কেউ কেউ তাকে সাহায্য করতে চাইলেও, বাসের কাঠামো তাতে বাধা দেয়। অচিরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন সেই ব্যক্তি। ঘটনার সময় বাসে থাকা অনেক শিশু ও প্রবীণ যাত্রী গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পোস্টদাতা মিনহা ইসলাম জানান, তিনি ও তার মা-ও গরমে অসুস্থ হয়ে যান।
তিনিআরও বলেন, “এটা ছিল অপরাধমূলক অবহেলা। আমাদের আটকে রাখা হয়েছিল মৃত্যুকূপে,কোনো বায়ুচলাচল, জরুরি সহায়তা বা ন্যূনতম যত্ন ছিল না।”
সোশ্যাল মিডিয়ায়ঘটনার পর ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই পুর্বাশা পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও দ্রুত তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। একইসঙ্গে দেশের দূরপাল্লার পরিবহন ব্যবস্থায় নিরাপত্তা, মান এবং যাত্রীসেবার ন্যূনতম মান বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি ও পদক্ষেপেরদাবি উঠেছে। এদিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি পুর্বাশা পরিবহনের পক্ষ থেকে।
Leave a comment