ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সোমবার (২০ অক্টোবর) তেহরানে একটি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বলেন, কোনো দেশই অন্য দেশের পারমাণবিক সক্ষমতা বা শিল্প নিয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বলেন, কারও পারমাণবিক ক্ষমতা থাকা উচিত কি না তা নির্ধারণ করার অধিকার ওয়াশিংটনের নেই।
খামেনি তার বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দাবি ও আচরণকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “আপনারা অন্য দেশের পারমাণবিক শিল্প নিয়ে হস্তক্ষেপ করার কে? কোন দেশের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়, সেটা বলার আপনারা কে? ইরানের পরমাণু সক্ষমতা বা শিল্প আছে কি নেই তার সঙ্গে আপনাদের কী সম্পর্ক ?” যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে তিনি অগ্রহণযোগ্য আর অবৈধ বলে আখ্যা দেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সংসদ নেসেটে এক বক্তৃতায় দাবি করেন যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে তারা ‘বোমা ফেলেছে’ এবং সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যকে কঠোরভাবে খণ্ডন করে খামেনি বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলে গিয়ে একগাদা ফাঁকা বুলি আর হাস্যকর আচরণের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত দখলদার জায়নিস্টদের আশাবাদী করতে চেয়েছেন। এটা তাদের মনোবল বাড়ানোর প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয় — স্বপ্ন দেখতে থাকুন।”
খামেনি আরও বলেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধকৌশল ও যুদ্ধহারের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী হতাশ ছিল এবং ট্রাম্পের সফর তাদের মানসিক সমর্থন জোগানোর উদ্দেশ্যে।
খামেনি তার ভাষণে ইরানিদের প্রযুক্তিগত অর্জন ও স্বনির্ভর ক্ষমতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল যে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গিয়েছিল তা ইরানীয় তরুণদের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা থেকেই সম্ভব হয়েছে — এসব অস্ত্র কারও কাছ থেকে ধার করে বা ক্রয় করে নেয়া হয়নি, বরং দেশীয় প্রচেষ্টার ফল। তিনি বলেন, “এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো এখনো প্রস্তুত আছে এবং প্রয়োজন হলে আবার ব্যবহৃত হবে।”
গাজার সাম্প্রতিক সংঘর্ষ প্রসঙ্গে খামেনি তীব্র ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই ইসরায়েলের হাতে প্রচুর অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তুলে দিয়েছে, যা গাজার নিরস্ত্র বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়েছে। গাজা হামলায় শিশু ও নবজাতকের সংখ্যা উল্লেখ করে খামেনি বলেন, “ অসংখ্য শিশুই নিহত হয়েছে—তাদের মধ্যে কয়েক হাজার নবজাতক ও চার-পাঁচ বছরের শিশুরা রয়েছে; এরা কি সন্ত্রাসী ছিল?”
খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত দ্বৈতমুখিতা তুলে ধরে বলেন, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা ও কৌশল মূলত ইরানের জনগণের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে। আপনারা আমাদের বন্ধু নন, আমাদের শত্রু। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ভূখণ্ডে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভের দিকে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দেন—অন্য দেশের কাজে হস্তক্ষেপ ও বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন স্থগিত করে নিজের নাগরিকদের শান্ত ও নিরাপদ রাখা উচিত।
খামেনির মন্তব্যগুলো মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য কেবল কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক নীতি নয়, বরং দেশটির আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা ও জাতীয়তাবোধের দৃঢ় প্রতিফলন বলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
Leave a comment