গাজার কেন্দ্রীয় অংশে পানির জন্য লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ৬ শিশুসহ অন্তত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৬ জন, যাদের মধ্যে ৭ জনই শিশু। রবিবার স্থানীয় সময় আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। চিকিৎসা সংস্থা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি পানির ট্যাংকারের পাশে খালি জার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি ড্রোন থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। বিস্ফোরণে শিশুরা ছিটকে পড়লে আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিহতদের মরদেহ এবং আহতদের আল-আউদা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
ঘটনার পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসলামিক জিহাদের এক সদস্যকে লক্ষ্য করে তারা হামলা চালায়। তবে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে গোলাটি নির্ধারিত লক্ষ্যবস্তুতে না গিয়ে বহু মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। আইডিএফ স্বীকার করে, তারা যে স্থানে হামলা চালিয়েছে সেখানে বেসামরিক লোকজন অবস্থান করছিলেন এবং এ ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয়ক্ষতির জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করেছে।
বিবিসি হামলার পরবর্তী মুহূর্তের একটি ভিডিও যাচাই করেছে, যেখানে রক্তাক্ত শিশুদের মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। জানা গেছে, ঘটনাস্থলটি ছিল একটি স্থানীয় জুনিয়র হাই স্কুল থেকে মাত্র ৮০ মিটার দূরে। আশপাশে একটি কিন্ডারগার্টেন ভবনও ছিল। হামলার স্থান ও বিস্ফোরণের সূত্র সম্পর্কে বিস্তারিত নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
রবিবার গাজার কেন্দ্রীয় ও গাজা সিটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর পৃথক তিনটি হামলায় আরও অন্তত ১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি।
এদিকে, আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানায়, গত ছয় সপ্তাহে তাদের রাফা ফিল্ড হাসপাতালে যে পরিমাণ গণহত্যার শিকার আহত রোগী এসেছে, তা গত এক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। শুধুমাত্র শনিবারই হাসপাতালে ১৩২ জন আহত রোগী এসেছে, যাদের মধ্যে ৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
রেডক্রসের তথ্যমতে, এসব আহতের অধিকাংশই খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ২৭ মে থেকে গাজায় নতুন করে চালু হওয়া খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৭৮৯টি সহায়তা-সম্পর্কিত হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৬১৫টি ঘটেছে দক্ষিণ ও মধ্য গাজার ইউএস-ইসরায়েল সমর্থিত সহায়তা কেন্দ্রের আশপাশে।
ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের গুলিতে কেউ আহত হয়নি এবং তারা কেবল ‘হুঁশিয়ারির গুলি’ ছুড়েছিল। তবে ঘটনাস্থলের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভিড় করা ক্ষুধার্ত জনগণের ওপর সরাসরি গুলি চালানো হয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৮৮২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজায় স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশনসহ সব ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। শনিবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে হাসপাতাল, পানি সরবরাহ এবং খাদ্য উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানায়, “হাসপাতালগুলো অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, প্রসূতি ও নবজাতক বিভাগ অকার্যকর হয়ে পড়ছে, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও আর চলছে না।”
গাজার মানবিক সংকট এখন ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। নিহত শিশুদের জন্য দায় স্বীকার করলেও ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসন থামার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
Leave a comment