ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাকিস্তানি দাবি ঘিরে সৃষ্টি হওয়া ধোঁয়াশার কোনো নিরসন করলেন না ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। বৃহস্পতিবার (৮ মে) নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ নিয়ে সাংবাদিকদের কোনো সরাসরি উত্তর না দিয়ে কেবল জানান, ‘যথাসময়ে সরকারিভাবে উত্তর দেওয়া হবে।’
সন্ধ্যায় ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ বিষয়ে আয়োজিত দ্বিতীয় দফা ব্রিফিংয়ে মিশ্রির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। তারা জানান, পাকিস্তান উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একাধিক সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালেও ভারত সফলভাবে তা প্রতিহত করেছে। লাহোরের এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়ার কথাও জানান তারা।
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পররাষ্ট্রসচিব যখন পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি নিয়ে জিজ্ঞাসিত হন, তখন তিনি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “এই বিষয়ে এখন কিছু বলব না। সময় হলে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সব জানাবে।”
পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাতের সংঘাতে তারা রাফালসহ পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এই দাবিকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত প্রতিক্রিয়া না আসায় বিভ্রান্তি রয়ে গেছে।
এদিন আরও এক প্রশ্নে মিশ্র বলেন, “পাকিস্তান জন্মলগ্ন থেকেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে আসছে। ১৯৪৭ সালে তারা কাশ্মীরে আগ্রাসন চালিয়েছিল, অথচ জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে সেটিকে অস্বীকার করেছিল। আজও তারা সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে।”
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা জানতে চান, পাকিস্তানের সঙ্গে গোপনভাবে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না। জবাবে মিশ্র বলেন, “আমার কাছে এমন কোনো খবর নেই।”
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সর্বদলীয় বৈঠকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেন, পাকিস্তানে চালানো অভিযানে শতাধিক সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে। তবে এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে মিশ্রি কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “মোটে ৩৬ ঘণ্টা হয়েছে সংঘাতের পর। এখনই সব তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। ধৈর্য ধরুন।”
সাম্প্রতিক এই ভারত–পাকিস্তান উত্তেজনা একদিকে সীমান্ত অঞ্চলে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, অন্যদিকে বিশ্বমঞ্চেও আলোড়ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধবিমান ধ্বংসের মতো গুরুতর দাবি নিয়ে ভারতের নিরুত্তর অবস্থান হয়ত কূটনৈতিক কৌশল, কিন্তু এতে তথ্য বিভ্রান্তি ও গুজব ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
Leave a comment