
কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী হামলার জেরে ভারতের একতরফা প্রতিক্রিয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী। হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত যখন সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ একগুচ্ছ কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়, তখন তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (NSC) জরুরি বৈঠকে ভারতবিরোধী একাধিক পাল্টা পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। পাকিস্তানের মতে, এটি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা, যেটি একতরফাভাবে স্থগিত করার কোনো বৈধতা নেই। পানি দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবং কোনোভাবে এর প্রবাহ বন্ধ বা সীমিত করার প্রচেষ্টা যুদ্ধের শামিল হিসেবে বিবেচিত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইসলামাবাদ।
পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে ওয়াগা সীমান্তপথ অবিলম্বে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ৩০ এপ্রিলের পর এই পথ দিয়ে বৈধ ভারতীয় নাগরিকদেরও ফেরার সুযোগ থাকবে না। সেই সঙ্গে পাকিস্তানে অবস্থানরত সব ভারতীয় নাগরিকের সার্ক ভিসা বাতিল করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—তবে শিখ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে।
এছাড়া ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘অবাঞ্ছিত ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে দ্রুত দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মী সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে।
সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ভারতীয় সব বেসামরিক ও বাণিজ্যিক বিমান চলাচলের জন্য আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে সরাসরি ও পরোক্ষ সব ধরনের বাণিজ্যিক লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে, এমনকি পাকিস্তান হয়ে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গেও ভারতের বাণিজ্য বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী উত্তেজনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এর প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ও মানবিক স্থিতিশীলতায় গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। সংঘাতের এমন রূপ নিতে থাকা পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতার সম্ভাবনাও এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।
Leave a comment