বৃহস্পতিবার রাতটা ছিল উত্তেজনা, বিভ্রান্তি আর আতঙ্কে ভরা। জম্মু অঞ্চলে পাকিস্তানের মিসাইল হামলার সরাসরি প্রতিক্রিয়া গিয়ে পড়ল ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাণকেন্দ্রে—আইপিএলে। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় অনুষ্ঠিতব্য পাঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচ চলাকালেই আচমকা বন্ধ হয়ে যায় স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটগুলো। খেলা বন্ধ হয়ে যায় মাঝপথে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতে। পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, জম্মু ও তার আশপাশে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচটিতে টসে জিতে ব্যাটিং নেয় পাঞ্জাব কিংস। আক্রমণাত্মক শুরু করেন তরুণ ওপেনার প্রিয়াংশ আর্য। মাত্র ৩৪ বলে ৭০ রানের এক ঝড়ো ইনিংসে তিনি দলকে নিয়ে যান ১০.১ ওভারে ১২২ রানে। দর্শকরা যখন ব্যাটিং উপভোগ করছিলেন, তখনই স্টেডিয়ামের একটি লাইট টাওয়ার নিভে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই অন্ধকারে ডুবে যায় বাকি টাওয়ারগুলোও। অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় পুরো মাঠ।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, এটি কোনো কারিগরি সমস্যা। কিন্তু ক্রিকইনফো-সহ একাধিক ক্রিকেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম পরে জানায়, ম্যাচ ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ স্থগিত করা হয়েছে। নিরাপত্তাবাহিনী দর্শকদের দ্রুত মাঠ ত্যাগ করতে অনুরোধ করে। খেলোয়াড়দেরও সরিয়ে নেওয়া হয় ড্রেসিংরুমে।
পরবর্তী তদন্তে জানা যায়, রাত নয়টার কিছু আগে জম্মু, আখনুর, সাম্বা ও কাঠুয়ায় পাকিস্তান দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা হয়েছে। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই ধর্মশালায় উচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করে স্টেডিয়ামের আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, সেনা স্থাপনাগুলো টার্গেট করেই এ হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান।
এ ঘটনার ফলে শুধু ধর্মশালার ম্যাচ নয়, আগামী ১১ মে সেখানে নির্ধারিত আরও একটি আইপিএল ম্যাচও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আহমেদাবাদে। আইপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, সম্ভাব্য সব ম্যাচের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে পর্যালোচনা করা হবে।
দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার প্রভাব পড়েছে পাকিস্তান সুপার লিগেও। রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে ড্রোন হামলার কারণে পেশোয়ার–করাচি ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকালকের লাহোর–পেশোয়ার ম্যাচ নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা।
খেলাধুলা যেখানে সীমান্তের উত্তেজনা ভুলিয়ে দেয়, সেখানে এখন সেটিই যুদ্ধের ছায়ায় পড়েছে। ভারত-পাকিস্তানের সামরিক বৈরিতা এবার আঘাত হেনেছে উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া আসর আইপিএলে, যার প্রতিক্রিয়া হয়তো সীমিত থাকবে না শুধু খেলার মাঠেই।
Leave a comment