কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে এক ভয়াবহ সশস্ত্র হামলার ঘটনায় সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ (৩০) নামের এক তরুণ ঘোড়াচালক নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের রক্ষার চেষ্টা করে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনায় তিনজন পর্যটক আহত হলেও আদিল হুসেন ছিলেন একমাত্র নিহত ব্যক্তি। আদিলের এই আত্মত্যাগ কাশ্মীরজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হামলার দিন আদিল তাঁর ঘোড়া নিয়ে পর্যটকদের বৈসারানের তৃণভূমিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেসময় এক বন্দুকধারী পর্যটকদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বন্দুকধারীর রাইফেল কেড়ে নিতে গিয়ে আদিল গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর বুকে তিনটি গুলি লাগে। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
আদিলের বাবা হায়দার শাহ বলেন, “আমার ছেলে অন্যদের প্রাণ বাঁচিয়ে নিজের জীবন দিয়েছে। আমি ওর জন্য গর্বিত। সাহস না থাকলে কেউ এমন কাজ করতে পারে না।”
নিহত আদিল ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর ভাই সৈয়দ নওশাদ জানান, “এক পর্যটক যিনি এই হামলায় তাঁর বাবাকে হারিয়েছেন, তিনি হাসপাতালে এসে আমাদের আদিলের সাহসিকতার কথা জানান। আদিল না থাকলে আরও অনেক প্রাণ যেতে পারত।”
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বুধবার আদিলের জানাজায় অংশ নেন এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, “আদিল তাঁর জীবনের বিনিময়ে অন্যদের বাঁচিয়েছেন। তাঁর আত্মত্যাগ কাশ্মীর ও দেশের জন্য গর্বের।” তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “আদিলের পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। তাঁর সাহসিকতা চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।”
কাশ্মীরের পেহেলগামের হাপাতনার্ড গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে আদিলকে দাফন করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা বলছেন, আদিল শুধু একজন পনিওয়ালা ছিলেন না, ছিলেন এক নিঃস্বার্থ বীর, যিনি আতঙ্কের মুখেও নিজের মানবিক দায়িত্ব ভুলে যাননি।
Leave a comment