হাদির ওপর হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার টার্গেট করা হয়েছে হাসনাত আব্দুল্লাহকে। ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল অজয় রায়না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) হাসনাত আব্দুল্লাহর ছবি শেয়ার করে তাকে ‘পরবর্তী টার্গেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন—এমন পোস্ট ছড়িয়ে পড়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
পোস্টটিতে কর্নেল রায়না ‘হাদির পর পরবর্তী লক্ষ্য’ হিসেবে হাসনাত আব্দুল্লাহর নাম উল্লেখ করেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ওই পোস্ট শেয়ার করে রওশন হক নামের এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন যে, পোস্টদাতা একজন ভারতীয় সাবেক সেনা সদস্য, বহু বইয়ের লেখক এবং চলচ্চিত্র পরামর্শক। বিষয়টি সামনে আসার পর এটিকে একটি সার্বভৌম দেশের রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও প্রকাশ্য হুমকির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ; যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থার সম্পৃক্ততার প্রমাণ এখনো সামনে আসেনি।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে দাবি করা হচ্ছে, ওসমান হাদি-সহ মোট ৭০ জনকে লক্ষ্য করে একটি ‘তালিকা’ প্রস্তুত করা হয়েছে, যেখানে রাজনীতিবিদ, ‘জুলাই যোদ্ধা’ এবং সামাজিক কর্মীদের নাম রয়েছে। ওই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে হাসনাত আব্দুল্লাহর নাম রয়েছে—এমন তথ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়ালেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, যাচাইহীন তথ্য প্রচার যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি প্রকাশ্য হুমকির ইঙ্গিতগুলো উপেক্ষা করাও সমীচীন নয়।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেওয়া এক বক্তব্যে হাসনাত আব্দুল্লাহ ভারতের কথিত আধিপত্যবাদী নীতির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি তার সার্বভৌমত্ববিরোধী কোনো তৎপরতার মুখোমুখি হয়, তবে দেশটি তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় বিকল্প কূটনৈতিক পথ বিবেচনা করতে পারে। ওই বক্তব্যের পরপরই ভারতের আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কড়া প্রতিক্রিয়া আসে। তিনি ভারতকে ‘পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র’ উল্লেখ করে বাংলাদেশকে ‘শিক্ষা দেওয়ার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—এমন বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের ভাষা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের ভাষায়, রাজনৈতিক বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে সংযম না থাকলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে, ওসমান হাদির ওপর হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে কয়েকটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে, যেগুলোতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠ রয়েছে বলে দাবি করা হয়। অডিওগুলোর সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। তবু সেগুলোতে রাজনৈতিক সহিংসতার উসকানি ও বিরোধী পক্ষকে লক্ষ্য করে বক্তব্য থাকার অভিযোগ ওঠে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এসব অভিযোগ অস্বীকার বা ব্যাখ্যা দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, অডিওগুলোর উৎস ও সত্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া চলমান।
এর আগে গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হামলার অভিযোগ উঠেছিল। দলটির দাবি, ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি ঠেকাতে সংগঠিতভাবে বাধা দেওয়া হয় এবং শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্য ভিন্ন, এবং তদন্ত ছাড়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, রাজনৈতিক সহিংসতা ও হুমকির ঘটনায় তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ—প্রথমত, তথ্যের নিরপেক্ষ যাচাই; দ্বিতীয়ত, সম্ভাব্য ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; এবং তৃতীয়ত, কূটনৈতিক পর্যায়ে উত্তেজনা প্রশমনে কার্যকর যোগাযোগ। তাদের মতে, সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া হুমকিমূলক পোস্টগুলো রাষ্ট্রীয় অবস্থান নির্দেশ করে কি না—তা স্পষ্ট না হলেও, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, তারা সব ধরনের হুমকি ও সহিংসতার ইঙ্গিত গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছে। কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য হুমকির প্রমাণ মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদের গুজব না ছড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে, হাদির ওপর হামলার পর প্রকাশ্য পোস্ট, পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক বক্তব্য এবং আঞ্চলিক নেতাদের কড়া প্রতিক্রিয়া—এই সবকিছু মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে চলমান তদন্ত, কূটনৈতিক সংযম এবং আইনগত প্রক্রিয়ার ওপর—এমনটাই মত সংশ্লিষ্টদের।
Leave a comment