জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী বা ‘গানম্যান’ চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও স্বতন্ত্র রাজনীতিক আশরাফুল আলম, যিনি হিরো আলম নামেই অধিক পরিচিত। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে তিনি প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন বলে দাবি করেছেন।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে হিরো আলম সরাসরি প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই অনুরোধ জানান। পোস্টে তিনি লেখেন, “জরুরি প্রয়োজনে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত অনুরোধ, আমার সুরক্ষার জন্য একজন গানম্যান প্রদানের অনুরোধ করছি।”
হিরো আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যক্তিগত যোগাযোগে তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগজনক বার্তা পাচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তিনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সহায়তা চেয়েছেন।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর এক ঘোষণায় হিরো আলম জানান, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান। ওই ঘোষণার পর থেকেই হুমকির মাত্রা বেড়েছে বলে তার অভিযোগ। তবে কারা বা কোন পক্ষ থেকে এই হুমকি আসছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি।
হিরো আলমের রাজনৈতিক যাত্রা নতুন নয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি ব্যাপক আলোচনায় আসেন। এরপর বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি গণমাধ্যমের নজরে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনেও অংশ নেন।
ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রের বাইরে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল। সেই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, তাকে মারধর করা হচ্ছে। ওই ঘটনার পর নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। হিরো আলম নিজেও সেই অভিজ্ঞতাকে ‘জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর মুহূর্তগুলোর একটি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেই এবার আগেভাগে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানালেন তিনি। তার ঘনিষ্ঠদের মতে, অতীত অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে এখনো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সাধারণত কোনো ব্যক্তি বা প্রার্থী নির্দিষ্ট হুমকির মুখে পড়লে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মূল্যায়নের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দেওয়া হয়। হিরো আলমের আবেদন সেই প্রক্রিয়ার আওতায় বিবেচিত হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
Leave a comment