মাদারীপুরের শিবচরে কাদিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিখোঁজ তিন বান্ধবীর অবশেষে সন্ধান মিলেছে। কয়েকদিনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পর সোমবার তারা পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে। জানা গেছে, ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার আকস্মিক পরিকল্পনায় তারা কাউকে কিছু না জানিয়ে যাত্রা করেছিল। তবে রাজধানীতে গিয়ে টাকার অভাবে বিপাকে পড়ে তারা।
নিখোঁজ তিন ছাত্রী—তাদের বয়স ১৪ থেকে ১৫ বছর—বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাত্র এক হাজার টাকা হাতে নিয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। ট্রেনে ও বাসে যাত্রা শেষে তারা শাহজাদপুর এলাকায় গিয়ে পৌঁছায়। দিনের আলোয় তারা কিছু সময় ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ালেও সন্ধ্যার পর পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে শুরু করে।
টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আশ্রয়হীন অবস্থায় অনিশ্চয়তায় পড়ে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তখন তামান্না নামে একজন পথচারীর মোবাইল ফোনের সাহায্যে একজন বান্ধবী তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিষয়টি জানতে পেরে তামান্নার বাবা ঢাকায় তার এক আত্মীয়কে জানালে, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকেই উদ্ধার করে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন।
পরদিন তিন ছাত্রীর অভিভাবকেরা ঢাকায় গিয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তারা সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে এ ঘটনায় এলাকায় ও অভিভাবকমহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ বিষয়টিকে দুশ্চিন্তার বিষয় হিসেবে দেখলেও, অনেকে সামাজিকভাবে এমন ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছাকে স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ কিশোরীদের দুঃসাহস নিয়ে রসিকতা করলেও, অনেকে অভিভাবকদের কঠোর মনোভাব ও পরিবারে শিশুদের বিনোদনমূলক সুযোগ সীমিত থাকার দিকেও আঙুল তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন, শিশুদের জীবনের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যে ঘুরতে যাওয়া কিংবা অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে তারা বাস্তব জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে প্রস্তুত থাকতে পারে।
অন্যদিকে, স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং অভিভাবকদের সন্তানদের চলাফেরা ও মানসিক অবস্থার প্রতি আরো মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসিক বিকাশ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে এলাকায়। সমাজকর্মী, শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা একমত হয়েছেন—শিশুদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা, উভয় দিকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে।
Leave a comment