নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর এলাকায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তার ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান বিরোধের জেরে আবদুল কুদ্দুস (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার রাতে এ হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা লাশ নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্দর থানার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের শাহী মসজিদ হাফেজিবাগ এলাকায় গত কয়েকদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। একপক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বাবু ও মেহেদি, অন্যপক্ষের নেতৃত্বে রনি ও জাফর। এই দুই পক্ষই স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। অটোরিকশা স্ট্যান্ড দখলসহ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় উত্তেজনা দেখা দেয়।
গত শুক্রবার দুই পক্ষই এলাকায় লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। শনিবার রাতে আবদুল কুদ্দুস চা পান করতে স্থানীয় স্ট্যান্ড এলাকায় গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে চায়ের দোকানে ডেকে নেয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে শুরু করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত কুদ্দুস রনি-জাফর পক্ষের পারভেজের বাবা বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজন ও স্থানীয় লোকজন হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে এলাকায় এসে বিক্ষোভ শুরু করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন রাস্তায় অবস্থান নেন এবং হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এই পরিস্থিতিতে রাত ১১টার দিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ডিবি পুলিশের একটি যৌথ দল ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি শান্ত করতে অভিযান চালায়। এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, “পুরোনো বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সন্ত্রাসীরা কুদ্দুসকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেছি এবং তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি। এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। নিহত কুদ্দুসের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই পক্ষ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ বারবার সহিংসতার শিকার হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
Leave a comment