নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিনেও রক্তপাত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বীরগাঁও গ্রামে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন ফেরদৌসী বেগম (৪৫)। নিহত নারী ওই গ্রামের রায়েছ আলীর স্ত্রী।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সকালে একই এলাকায় সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী ইদন মিয়া (৫৫) প্রাণ হারান। দুই দিনে টানা সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বলছে, আধিপত্য বিস্তার, বালু উত্তোলন ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এ সহিংসতা শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আলোকবালী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী ও বহিষ্কৃত সদস্য সচিব আব্দুল কাইয়ুম মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বালু উত্তোলন, দলীয় নেতৃত্ব এবং এলাকা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্ব দুই গ্রুপকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঠেলে দিয়েছে। উভয় গ্রুপের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও যুক্ত আছেন।
শাহ আলম চৌধুরী অভিযোগ করেন, আব্দুল কাইয়ুম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তার কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালান। এতে কাইয়ুমের ঘনিষ্ঠ শিতলের গুলিতে ফেরদৌসী বেগম নিহত হন। তিনি হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
তবে আব্দুল কাইয়ুম মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আসলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের লোকজন অবৈধ অস্ত্র চালানোর সময় ফেরদৌসী বেগম গুলিবিদ্ধ হন। তিনি দাবি করেন, আগের দিন তার কর্মী ইদন মিয়াকে গুলি করে হত্যার পর আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে নতুন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে দায় তার গ্রুপের ওপর চাপাতে চাইছে।
সংঘর্ষ চলাকালীন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যমুনা টিভির সাংবাদিক আইয়ুব খান সরকারের ওপরও হামলা হয় বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার আরেকজন খুন হয়েছেন। নিহত নারীর শরীরে বড় গর্তের মতো চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা প্রাথমিকভাবে গুলির ক্ষত মনে হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
তিনি আরও জানান, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
টানা দুই দিনে দুইজন নিহত হওয়ায় আলোকবালীতে উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং স্থানীয়রা চরম ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

Leave a comment