মঙ্গলবার গভীর রাতে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগকে ঘিরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) উত্তাল হয়ে ওঠে । অভিযোগের মুখে ট্রিপল-ই (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘রেডিটে’। সেখানে শ্রীশান্ত রায় নামে একজন নারী সহপাঠীকে ধর্ষণের কথা উল্লেখ করে পোস্ট করেন বলে অভিযোগ ওঠে। একই সঙ্গে বোরকা, হিজাব ও নারীদের নিয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি ভাইরাল হতেই বুয়েট ক্যাম্পাসে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাত ১১টার পর থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদফতর (ডিএসডব্লিউ) ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার ও স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান।
একজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বলেন,“রেডিটে ওই শিক্ষার্থী স্বীকার করেছে, সে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এক নারী সহপাঠীকে ধর্ষণ করেছে। এমন একজন অপরাধী আমাদের সহপাঠী হতে পারে না। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কার ও আইনি শাস্তি চাই।” বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— “ধর্ষকের জায়গা জেলে, বুয়েটে নয়” এবং “We want justice”।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রকল্যাণ পরিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুদ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এসে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন,“ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শ্রীশান্ত রায়কে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।”
তবে শিক্ষার্থীরা সাময়িক নয়, স্থায়ী বহিষ্কার ও অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান। এ সময় অধ্যাপক মাসুদ বলেন,“স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। তবে উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রীশান্ত রায়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। খুব দ্রুতই মামলা দায়ের ও গ্রেফতার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।”
তিনি আরও জানান, যদিও আইন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী বা সহপাঠীদের পক্ষ থেকে মামলা করা উচিত, তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিজেদের পক্ষ থেকেই মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঘটনার পর রাতেই বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরিস্থিতি যাতে অস্থিতিশীল না হয়, সে জন্য পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা টিম মোতায়েন করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেন,“বুয়েট একটি মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমরা নারীদের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কোনো অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।” বুয়েট প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে একটি স্বতন্ত্র তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে, যারা শিগগিরই তাদের প্রতিবেদন দেবে। রিপোর্টের ভিত্তিতে শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Leave a comment