সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে—এই অভিযোগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ ও পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে দলটির শীর্ষ নেতারা গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলমের কারণে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমরা লিখিতভাবেই তাঁদের অপসারণের দাবি জানিয়েছি।” তিনি জানান, এই দাবির ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট আশ্বাস না মিললেও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বক্তব্যের ভিত্তিতে বিএনপি পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাবে।
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন—এই তিন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “সংস্কারে সরকারের সম্মতি রয়েছে এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস মিলেছে। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে বিচার করবে, এ নিয়ে সরকার দ্বিমত পোষণ করেনি।” তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব—এই বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, “একটি নির্বাচন ঘোষণাই বর্তমান নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে থামিয়ে দিতে পারে। শান্তি এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এটি জরুরি।” তিনি দ্রুত নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেওয়া প্রবীণ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। তিনি বলেন, “যেকোনো অজুহাতে নির্বাচন বিলম্ব করা হলে আবার স্বৈরাচারের ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি হবে, যার দায় বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করতে হলে একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ দরকার। সেই সঙ্গে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ করে একটি গ্রহণযোগ্য উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে।”
বিএনপির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারের বিচারপ্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিএনপির দাবি সবচেয়ে বেশি জোরালো। বিএনপি সরকারে গেলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ বিচার নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান মোশাররফ হোসেন।
তবে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেনি, বরং শুরু থেকেই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছে বলে জানান নেতারা।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে বিএনপির চার নেতা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সালাহউদ্দিন আহমদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল মঈন খান এবং খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির এই অবস্থান রাজনৈতিক সমঝোতার পথকে আরও স্পষ্ট করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Leave a comment