আবারও ভয়াবহ দাবানলের শিকার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এবার দাবানলে অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের কাছের দেশটির ৯৬ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ এবং একটি পানি শোধনাগার সহ কয়েক ডজন স্থাপনা পুড়ে গেছে সম্পূর্ণভাবে ।
এছাড়া, অগ্নিকান্ডের ফলে ক্লোরিন গ্যাস ছড়িয়ে পড়াতে সেখান থেকে দমকলকর্মীরা সরে যেতে বাধ্য হলে, আরও ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে যায় আগুন। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ ছাড়াও দাবানলে আরও অন্তত ৫০ থেকে ৮০টি অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দেশটির ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (এনপিএস)
এখনও দাবানলের আগুন জ্বলছে পার্কের নর্থ রিমের কাছাকাছি দুটি জায়গায় । ৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এই দাবানল ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার এবং ৯ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দাবানল হোয়াইট সেজ ফায়ার নামে পরিচিত । স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নর্থ রিম পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং শত শত পর্যটক ও বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়, দুটি দাবানল ‘ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার’ ও ‘হোয়াইট সেজ ফায়ার’ বর্তমানে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নর্থ রিম ও তার আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার সরাসরি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ এবং আশপাশের স্থাপনাগুলোকে পুড়িয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৪ জুলাই গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের উত্তরাঞ্চলে হঠাৎ এক বজ্রপাত থেকে সূত্রপাত হয় দাবানলটির । উত্তর প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া আগুনে পুড়ে যায় শত বছরের পুরনো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ ছিল।
১৯৩৭ সালে নির্মিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ ছিল উত্তর আমেরিকার অন্যতম পুরনো পার্ক লজ। ইউনেস্কো ঘোষিত এই ভবনটিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘জাতীয় ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এটি থেকে হাজারো দর্শনার্থী গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের একান্ত সৌন্দর্য উপভোগ করতেন । এই দাবানলের ফলে আজ যেনো তা শুধুই স্মৃতি।
ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস জানায়, দাবানলে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি ঘটেনি এবং বাসিন্দা ও পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ ছিল একটি মৌসুমি হোটেল, যা ১৯২৮ সাল থেকে নর্থ রিমে পর্যটকদের আতিথ্য দিয়ে আসছিল। ১৯৩২ সালে একটি রান্নাঘরের আগুনে আগের লজটি ধ্বংস হয়; পরে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয় ১৯৩৭ সালে।
প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই লজ খোলা থাকে। চলতি বছরের ১৫ মে চালু হয়েছিল এবং ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চালু থাকার কথা ছিল। তবে দাবানলে লজের মূল ভবন ও আশপাশের ১২০টি কেবিন আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছেন, হোয়াইট সেজ ফায়ার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ৫০০ জন ফায়ারফাইটার । আকাশপথেও রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার নিয়ন্ত্রণেও কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তবে চলমান গরম, শুষ্ক বাতাস এবং ঝোড়ো হাওয়া পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
অতি ভয়ংকর এই দাবানলে চিকিৎসার বর্জ্যপ্ল্যান্ট পুড়ে যাওয়ায় ক্লোরিন গ্যাস ছড়ানোর কারণে পুরো এলাকাজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট ও চোখ জ্বালাপোড়া এমনকি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমেরিকার স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক করেছে।
Leave a comment