রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার নিজ বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় আরমান আহমদ শাফিন নামে এক জুলাইযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে উত্তর ফায়দাবাদ এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আরমান আহমদ শাফিন ছিলেন জুলাইযোদ্ধা সংসদের সাবেক আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের আহত যোদ্ধা। মৃত্যুর কারণ নিয়ে পরিবারের সদস্য ও সহযোদ্ধাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভিন্নমত।
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাইফুর রহমান মির্জা জানান, শনিবার দুপুরের দিকে খবর পেয়ে পুলিশ আরমান আহমদের বাসায় যায়। সেখানকার একটি কক্ষ ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ সময় ধরে দরজায় কড়া নাড়লেও কোনো সাড়া না পেয়ে থানায় খবর দেন।
ওসি বলেন,“পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখতে পায়, ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় আরমান আহমদ শাফিনের মরদেহ ঝুলছে। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি আত্মহত্যা হতে পারে। তবে পারিবারিক কলহের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আরমান বাবা, মা ও স্ত্রীর সঙ্গে একই বাসায় বসবাস করতেন। দুপুরের দিকে পরিবারের সবাই ঘরের বাইরে ছিলেন। ফিরে এসে তারা দরজা বন্ধ অবস্থায় পান। এক প্রতিবেশী বলেন, “আরমান ভাই অনেক শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কোনো শত্রুতা বা ঝগড়ার কথা কখনো শুনিনি। হঠাৎ তার মৃত্যু আমাদের জন্য বড় ধাক্কা।”
আরমান আহমদের মৃত্যু নিয়ে জুলাইযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে শনিবার বিকেলে ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়,“আরমান আহমদ শাফিনের মৃত্যু ইচ্ছাকৃতভাবে ‘আত্মহত্যা’ বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আমরা দাবি করছি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক।”
সংগঠনটি আরও জানায়, আরমান আহমদ ছিলেন জুলাই আন্দোলনের এক সাহসী কর্মী, যিনি আন্দোলন-পরবর্তী সময়েও তরুণদের সংগঠিত রাখতে ভূমিকা রাখছিলেন। তার আকস্মিক মৃত্যু আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। দক্ষিণখান থানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করা যাবে বলে জানিয়েছেন র্তারা।
ওসি তাইফুর রহমান মির্জা বলেন, “আমরা আত্মহত্যা বা হত্যাকাণ্ড—দুই দিক থেকেই বিষয়টি দেখছি। পরিবারের সদস্য ও সংগঠনের বক্তব্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনো কিছুই আমরা অগ্রাহ্য করছি না।”
Leave a comment