তামিল সুপারস্টার থালাপতি বিজয়ের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ ও ধর্মীয় সংহতির বার্তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। চেন্নাইয়ে বিশাল ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ এবং রোজা রাখার সিদ্ধান্ত তার রাজনৈতিক কৌশলের অংশ নাকি বাস্তব বিশ্বাসের প্রতিফলন—এ নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক।
দক্ষিণী সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা থালাপতি বিজয় সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে প্রবেশের ঘোষণা দিয়েছেন। তার রাজনৈতিক দল ‘তামিলাগা ভেত্রি কড়গম’ (টিভিকে) ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই রাজনৈতিক যাত্রার অংশ হিসেবে সম্প্রতি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিজয় চেন্নাইয়ের রোয়াপোট্টা এলাকায় একটি বৃহৎ ইফতার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
৭ মার্চ ওয়াইএমসিএ মাঠে অনুষ্ঠিত এই ইফতার পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ১৫টি মসজিদের ইমামসহ প্রায় ৩০০০ মানুষ। বিজয় নিজেও সারাদিন রোজা পালন করেন এবং নামাজে অংশ নেন। সাদা কুর্তা ও টুপি পরা তার ছবি এবং ভিডিও দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা।
বিজয়ের এই পদক্ষেপকে কেউ দেখছেন আন্তরিক সহমর্মিতার প্রকাশ হিসেবে, আবার কেউ মনে করছেন এটি কেবল ভোটের রাজনীতি।
বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, তামিলনাড়ুর মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৬% এবং তারা রাজ্যের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে বিজয় মুসলিম ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন বলে অনেকের ধারণা। অন্যদিকে, বিজয়ের সমর্থকরা বলছেন, তিনি সব সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যই কাজ করতে চান এবং এটি তার সর্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গিরই বহিঃপ্রকাশ।
তবে, সামাজিক মাধ্যমে কিছু গ্রুপ বিজয়ের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার গুঞ্জনও ছড়িয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত তিনি এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি, তবে তার ধর্মীয় অবস্থান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বিজয় ঘোষণা করেছেন যে তার আসন্ন সিনেমা ‘জানা নায়া গান’ হবে তার শেষ চলচ্চিত্র। এটি হবে তার ক্যারিয়ারের ৬৯তম এবং শেষ সিনেমা, যেখানে তিনি একজন রাজনীতিবিদের চরিত্রে অভিনয় করছেন।
শিল্প মহলের মতে, এই সিনেমার জন্য বিজয় ২৭৫ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নিচ্ছেন, যা তাকে ভারতের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তবে তিনি মনে করেন, সিনেমার পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনে মানুষের জন্য কাজ করাই তার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
থালাপতি বিজয়ের এই নতুন রাজনৈতিক যাত্রা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু তার সাম্প্রতিক ইফতার আয়োজন, ধর্মীয় সংহতির বার্তা এবং রাজনীতিতে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ স্পষ্টতই তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি আদর্শনিষ্ঠ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন নাকি শুধুই আরেকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকবেন, তা নিয়েই এখন চলছে জল্পনা।
Leave a comment