সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে মেঘনা ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (১২ মার্চ) ব্যাংক তিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। যদিও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা এখনও স্থিতিশীল রয়েছে, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে পরিচালকদের অনুপস্থিতি ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠিত এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রভাব ছিল। মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এইচ এন আশিকুর রহমান। এছাড়া, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরাও পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। নতুন পর্ষদে উজমা চৌধুরী ও প্রতিনিধি পরিচালক তানভীর আহমেদ যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মামুনুল হক ও রজব আলী, যমুনা ব্যাংকের সাবেক এমডি নজরুল ইসলাম, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত এমডি হাবিবুর রহমান ও হিসাববিদ আলী আকতার রিজভী স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন আল হারামাইন পারফিউমের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহতাবুর রহমান, যিনি সরকার পরিবর্তনের পর দেশত্যাগ করেন। তার অনুপস্থিতিতে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিই। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম ও হিসাববিদ মিজানুর রহমান স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের (এনআরবিসি) চেয়ারম্যান ছিলেন রাশিয়া আওয়ামী লীগের নেতা এস এম পারভেজ তমাল। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া।
এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে সাতটি এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এসব ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের জন্য আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়াং ও কেপিএমজি নামে দুটি আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Leave a comment