ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) হলের নামকরণকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে প্রয়াত শিক্ষার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির নামে ‘শহিদ ওসমান হাদি হল’ নামকরণ করেছেন হলটির শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে একাধিক দাবিতে রোববার উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে হলের প্রধান ফটকে ক্রেন ব্যবহার করে নতুন নামের সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। এ সময় হলের ভেতরে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল অপসারণ করে সেখানে শহিদ ওসমান হাদির গ্রাফিতি অঙ্কনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) আহমেদ আল সাবাহ জানান, হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “হলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হলটির নাম শহিদ ওসমান হাদি হল করার পক্ষে মত দিয়েছেন। সেই গণতান্ত্রিক মতামতের ভিত্তিতেই আমরা নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “হলে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়ালচিত্রগুলো মুছে ফেলে সেখানে ওসমান হাদির গ্রাফিতি আঁকা হবে। এটি শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।”
হল প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ আল সাবাহ বলেন, “হল প্রশাসন বিষয়টি জানে। তবে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আপত্তি কিংবা অনুমোদনের কথা জানায়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের মতামতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।”
এদিকে, হলের নাম পরিবর্তনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্যায়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এটিকে ‘ফ্যাসিবাদের চিহ্ন অপসারণ’ হিসেবে দেখলেও অন্য অংশ প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আরও বিস্তৃত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ডাকসুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদের পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
বার্তায় বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে শহিদ ওসমান হাদি হল করা, ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তন এবং জুলাই গণহত্যার সমর্থনকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, “ফজিলাতুন্নেছা হলের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুটি নাম নিয়ে আলোচনা চলছে—ফেলানী হল এবং ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম হল। হলের শিক্ষার্থীরা যে নামের পক্ষে সবচেয়ে বেশি মতামত দেবেন, সেটিকেই চূড়ান্ত করার পক্ষে ডাকসু ও হল সংসদ থাকবে।”
তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে ডাকসুর ভিপি ও জিএস হল সংসদের সঙ্গে পূর্ণ সমন্বয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবেন। তিনি বলেন,“ডাকসুর মূল লক্ষ্য হলো হলগুলোর নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাসিবাদের সব চিহ্ন মুছে ফেলা।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, প্রশাসনিক কাঠামো এবং আইনগত প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
Leave a comment