বিতর্কিত ও আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও সামাজিক কর্মী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম আবারও জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে এবার তিনি বগুড়া নয়, ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সোমবার (৩ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হিরো আলম বলেন, তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন এবং এই আসন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
নিজের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন,“নির্বাচনে অংশ নেওয়া আমার কাছে শুধু জয়ের বিষয় না—এটা একটা প্রতিবাদের মাধ্যম। দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, এটা সবার প্রত্যাশা। আমি চাই মানুষ ভোট দিতে উৎসবের মতো করে কেন্দ্রে যাক। আমি ১০০ ভোট পেলেও সমস্যা নেই, কিন্তু নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়।”
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। “অনেক দলের প্রধানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। তাদের দেওয়া প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করছি। ব্যাটে-বলে মিললে কোনো দলে যেতে পারি, না মিললে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই লড়ব।
নিজেকে “নিম্নবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি” দাবি করে হিরো আলম বলেন, “আমি সংসদে যেতে চাই গরিব, প্রান্তিক আর অবহেলিত মানুষদের প্রতিনিধি হয়ে। কারণ এই দেশের আসল শক্তি ওই পরিশ্রমী মানুষের মধ্যেই আছে। তারা সারাদিন কাজ করে দেশ চালায়, কিন্তু রাষ্ট্রের সেবা পেতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয় তারাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমার রাজনীতি ক্ষমতা বা অর্থের জন্য নয়, মানুষের জন্য মাঠে থাকার প্রতিশ্রুতি থেকেই করছি।” ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বনানী, বারিধারা, মহাখালী ও মিরপুরের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত এই ঢাকা-১৭ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন।
এই আসনে এবারও হিরো আলমের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ। এছাড়া জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশ, এনসিপি ও আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও এই আসনে লড়বেন বলে জানা গেছে।
এর আগে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন হিরো আলম। যাচাই-বাছাইয়ের পর তার প্রার্থিতা দুইবার বাতিল করা হলেও, আদালতের আদেশে তিনি প্রতীক ফিরে পান এবং ‘সিংহ’ প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেন।তবে ভোটের দিন কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন তিনি।
পরবর্তীতে অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ার পর অনুষ্ঠিত ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনেও অংশ নেন হিরো আলম। সেই নির্বাচনের দিন একটি কেন্দ্রে তার ওপর হামলা হয়, যা দেশজুড়ে সমালোচনার জন্ম দেয়।
ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথ বিবৃতি দিয়ে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা জানায় এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানায়।
হিরো আলমের মতে, তিনি রাজনীতির মূলধারার প্রতীক হতে চান না, বরং সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে সংসদে যেতে চান। ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের প্রার্থিতা নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ দেখছেন এটি “সামাজিক প্রতিবাদের” প্রকাশ, কেউ আবার বলছেন এটি তার “জনপ্রিয়তার রাজনৈতিক প্রয়োগ”।
যেভাবেই দেখা হোক না কেন, হিরো আলম আবারও নির্বাচনের মাঠে নামছেন—এবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় আসনে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীরা অভিজ্ঞ ও প্রভাবশালী। এখন দেখার বিষয়, ঢাকা-১৭ আসনের ভোটযুদ্ধে জনসমর্থন ও প্রতীকী রাজনীতির মিশ্রণে তিনি কতটা সাড়া ফেলতে পারেন।
                                                                        
                                                                        
                            
                            
                                
			            
			            
 
			        
 
			        
 
			        
 
			        
				            
				            
				            
Leave a comment