দুই দিন ধরে বাবার কোনো খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন ছেলে ঢাকা থেকে ছুটে এসে ভাড়া ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখতে পান, রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে আছে বাবার নিথর দেহ। দুর্গন্ধে ভরে আছে চারদিক। সোমবার বেলা তিনটার দিকে টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার ময়থাচালা এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া ব্যক্তি শেখ ফারুকুজ্জামান (৭৪), একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি একসময় ঢাকায় ব্যবসা করতেন এবং ধানমন্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নিজস্ব বাসা ছিল। বছর দশেক আগে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর একাকী জীবনযাপন করছিলেন। বয়স বাড়ায় শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, মাস দুয়েক আগে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে অভিমান করে তিনি সখীপুরে চলে আসেন এবং পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে চারতলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে একা থাকতে শুরু করেন। নিয়মিত খোঁজখবর রাখলেও গত দুই দিন ধরে ছেলেমেয়েরা তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আজ সোমবার ছেলে শেখ দুর্জয় জামান ঢাকার বাসা থেকে সখীপুরে ছুটে আসেন।
ফ্ল্যাটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া গেলে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তখন রান্নাঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায় শেখ ফারুকুজ্জামানের মরদেহ। ইতিমধ্যে লাশ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ছিল।
ঘটনার খবর পেয়ে সখীপুর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সখীপুর থানার উপপরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, “লাশের অবস্থা দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর মৃত্যু দুই দিন আগেই হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ ছেলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
বাবাকে হারিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শেখ দুর্জয় জামান বলেন, “বাবা ঢাকায় একা থাকতে চাইতেন না। তাই সখীপুর চলে এসেছিলেন। আমরা নিয়মিত ফোনে খোঁজখবর রাখতাম। কিন্তু এমন পরিণতির কথা ভাবিনি। বাবা, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।”
এই ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ফারুকুজ্জামান শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তাঁর মৃত্যু নিঃসঙ্গ জীবনের এক নির্মম পরিণতি।
Leave a comment