দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমছে না। শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন নতুন ৭৭৮ জন রোগী। রোববার (২২ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম প্রকাশিত দৈনিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, নতুন ভর্তি ৭৭৮ জন রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম বিভাগে (১৩৪ জন) এবং ঢাকায় (সিটি কর্পোরেশন এলাকা মিলিয়ে ২১০ জন)। প্রতিটি বিভাগেই নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ায় ডেঙ্গুর বিস্তার সারাদেশেই অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ৭৭৮ জন ডেঙ্গু রোগীর বিভাগভেদে সংখ্যা হলো—
• চট্টগ্রাম বিভাগ: ১৩৪ জন
• বরিশাল বিভাগ: ৮৩ জন
• ঢাকা বিভাগ (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে): ১২১ জন
• ঢাকা উত্তর সিটি: ১২৯ জন
• ঢাকা দক্ষিণ সিটি: ৮১ জন
• খুলনা বিভাগ (সিটি কর্পোরেশনের বাইরে): ১১২ জন
• ময়মনসিংহ বিভাগ: ৪৪ জন
• রাজশাহী বিভাগ: ৪৮ জন
• রংপুর বিভাগ: ১৯ জন
• সিলেট বিভাগ: ৭ জন
এই বিস্তার প্রমাণ করে যে নগর ও উপনগর এলাকা ছাড়িয়ে ডেঙ্গু এখন পুরো দেশেই ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে আরও ১,১১১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে মোট ৮৭ হাজার ৪৪২ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে চিকিৎসা নিয়েছেন মোট ৯০ হাজার ২৬৪ জন রোগী। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুয়েই মারা গেছেন ৩৬৪ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়; তবে আবহাওয়া পরিবর্তন, এবং জনসচেতনতার ঘাটতির কারণে ডেঙ্গুর বিস্তার অব্যাহত থাকছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
• মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও জনগণের যৌথ উদ্যোগ জরুরি।
• বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন ভবন, ছাদ ও ডাস্টবিন এলাকায় জমা পানি অপসারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
• আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাপনায় চাপ আরও বাড়বে।
এদিকে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভিড় বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলেন, জ্বর, মাথাব্যথা, মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া, বমি কিংবা পেটব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসা নিতে হবে। দেশে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি প্রতিদিনই নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। মশকনিধন কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি জনসচেতনতাই পারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে—এমন মত বিশেষজ্ঞদের।
Leave a comment