জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ট্রেন-বাস সংঘর্ষে নিহত ৪০ জনের স্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় বেঁচে যাওয়া সোহানুর রহমানকে। আজ থেকে ১৯ বছর আগে, ২০০৬ সালের ১১ জুলাই সকালে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ঘটে যাওয়া সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সোহানুরের দাদা আবদুল হামিদসহ আরও ৩৯ জন বাসযাত্রী। সোহানুর বেঁচে যান—দাদা তাঁকে বাসের জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন বলে।
ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আক্কেলপুর পৌর শহরের আমুট্ট রেলক্রসিং পার হচ্ছিল যাত্রীবোঝাই একটি বাস। রেললাইনের ওপর হঠাৎ করে বাসটির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে আর সামনে এগোতে পারেনি। ঠিক তখনই ছুটে আসে একটি দ্রুতগামী ট্রেন। সংঘর্ষে বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়, ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৪০ জন, আহত হন ৩৮ জন। দুর্ঘটনার পর ওই অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হলেও নিহতদের স্মৃতিতে কোনো স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি।
বেঁচে যাওয়া সোহানুর রহমান বর্তমানে ২৮ বছরের যুবক। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “আমি তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। দাদার সঙ্গে জয়পুরহাট যাচ্ছিলাম। বাসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে চোখ খুলি। দাদা তখন আমাকে জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন। আমি বেঁচে যাই, কিন্তু দাদা আর ফিরে আসেননি।”
সেই দুর্ঘটনায় শান্তা গ্রামের মো. মোর্শেদের বাবা ও দুই ভাইসহ একই পরিবারের তিনজন মারা যান। মোর্শেদ বলেন, “পরিবারে আজও সেই শোক কাটেনি। ১৯ বছরেও কেউ কোনো স্মৃতিফলক নির্মাণ করেনি।”
আক্কেলপুর রেলস্টেশন মাস্টার হাসিবুল আলম বলেন, দুর্ঘটনার সময় ক্রসিংটি ছিল অরক্ষিত। বর্তমানে সেখানে স্থায়ী গেট ও গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যান চলাচল এখন অনেকটাই নিরাপদ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। নিহতদের পরিবার আবেদন করলে স্মৃতিফলক নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দীর্ঘ ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও স্থানীয়দের কাছে দিনটি রয়ে গেছে নীরব শোকের প্রতীক হয়ে। প্রতি বছর দিনটি আসে আর মনে করিয়ে দেয়, একটি গেটহীন রেলক্রসিং কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
Leave a comment