বিশ্বের অন্যতম পারমাণবিক অস্ত্র-বর্ধনশীল অঞ্চল দক্ষিণ এশিয়ায় চীন, ভারত ও পাকিস্তান ক্রমাগত নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসে একটি নতুন উদ্যোগ নিতে চাইছেন, যেখানে চীনের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সম্প্রতি ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প বলেন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চীনও এই পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। তাই, চীন, ভারত ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশকে পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের আলোচনায় যুক্ত করা প্রয়োজন।
ট্রাম্প দাবি করেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার এই পরিকল্পনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন, কারণ এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাস্তবে এই পরিকল্পনা কার্যকর করা অত্যন্ত কঠিন।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (SIPRI) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০টি, যা আগের বছরের তুলনায় ২২% বেশি। ভারতের কাছে ১৭২টি এবং পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের পারমাণবিক কৌশল চীনের সামরিক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়ামূলক। আর পাকিস্তান ভারতকে প্রতিরোধের জন্য নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধি করছে। ফলে, দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের আলোচনা অত্যন্ত জটিল।
দিল্লি-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাহুল বেদি মনে করেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা ভারত ও পাকিস্তানকে পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসে রাজি করাতে পারবে না। তিনি বলেন, “ভারত কেবল চীনকে লক্ষ্য করেই পরমাণু নীতি নির্ধারণ করে না, বরং পাকিস্তানের প্রতিরোধও মাথায় রাখে। চীন ও পাকিস্তান উভয় দিক থেকেই হুমকির মুখে রয়েছে ভারত।”
অন্যদিকে, ইসলামাবাদের পারমাণবিক বিশ্লেষক সৈয়দ মোহাম্মদ আলি বলেন, পাকিস্তান তার জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা স্বার্থের কারণে এই পরিকল্পনায় সহজে সম্মত হবে না।
চীন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে প্রথমে তাদের অস্ত্র হ্রাস করতে বলছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “যদি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্র উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে, তাহলে অন্যান্য দেশও আলোচনায় আসতে পারে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প যদি পুনরায় প্রেসিডেন্ট হন, তবে চীন, রাশিয়া এবং দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাস নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে পারেন। তবে বাস্তবতা হলো, দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা ও প্রতিযোগিতার বর্তমান অবস্থা ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা কঠিন করে তুলবে।
ট্রাম্পের এই উদ্যোগ পারমাণবিক অস্ত্র হ্রাসের বৈশ্বিক প্রচেষ্টার অংশ হলেও চীন, ভারত ও পাকিস্তানের জন্য এটি গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। বরং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, পারমাণবিক প্রতিযোগিতা আরও জটিল হতে পারে, বিশেষ করে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির কারণে।
Leave a comment