দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিগত ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ করেছে। আজ বুধবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এই তথ্য জানান। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুসন্ধানী দল যদি মনে করে যে কোনও মামলার প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আয়কর নথি বিশ্লেষণ প্রয়োজন, তবে তারা তা জব্দ করতে পারেন। সেই ধারাবাহিকতায় টিউলিপ সিদ্দিকের আয়সংক্রান্ত নথিগুলো জব্দ করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক তখন যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার ও নানা অবৈধ সুবিধা গ্রহণের অভিযোগের পর চলমান সমালোচনার মুখে চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এই ঘটনার পরই দুদক তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরীর স্ত্রী এমা ক্লেয়ার বার্টনের বিরুদ্ধে ৮৪ লাখ ৩৫ হাজার ১২৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি দুদকের চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানেরই অংশ বলে মন্তব্য করেন সংস্থার মহাপরিচালক।
এছাড়া মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এ দুর্নীতির বিষয়েও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তুলে ধরেন তিনি। মো. আক্তার হোসেন বলেন, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নগদের ৬৪৫ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার ৭৫৮ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক, নির্বাহী পরিচালক সাফায়েত আহমেদ, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক, ট্রেজারি বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মারুফুল ইসলাম ঝলক, চিফ টেকনোলজি অফিসার আবু রায়হান, হেড অব ফাইন্যান্স অপারেশন রাকিবুল ইসলাম, চিফ ফাইন্যান্স অফিসার আফজাল হোসেন, চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব উদ্দিন চৌধুরী এবং হেড অব বিজনেস ইন্টেলিজেন্স গোলাম মর্তুজা চৌধুরী।
দুদক সূত্র বলছে, এসব মামলায় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও তদন্তের আওতায় আসতে পারে। সম্প্রতি দেশে দুর্নীতিবিরোধী যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা বহির্বিশ্বের নজর কাড়ছে বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকেরা। সংস্থাটি জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী, কারও পরিচিতি বা রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা না করে দুর্নীতির প্রমাণ থাকলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টিউলিপ সিদ্দিকের আয়কর নথি জব্দের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিষয়টির আইনি পরিণতি ও তদন্তের অগ্রগতি ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অনুকম্পা তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a comment