টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় আওয়ামী লীগের দুই স্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পৃথক অভিযান চালিয়ে উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের দুটি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন—ভাওড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও চামুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন (৫৩) এবং একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শশধরপট্রি গ্রামের বাসিন্দা লতিফুর রহমান (৪৩)। পুলিশ জানিয়েছে, চলমান তদন্তের অংশ হিসেবেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে সোহাগপাড়া এলাকায় গোড়াই হাইওয়ে থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় গুলিবর্ষণের এক পর্যায়ে গোড়াই ইউনিয়নের লালবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হিমেল গুরুতর আহত হন। গুলির আঘাতে তার দুই চোখ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান।
এই ঘটনার পর হিমেলের মা নাছিমা বেগম ন্যায়বিচারের দাবিতে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মির্জাপুর আমলি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক এবং আওয়ামী লীগ নেতাসহ মোট ১০০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়, যা মামলাটিকে আলোচিত ও সংবেদনশীল করে তোলে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার সময়কার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা, আন্দোলনস্থলে উপস্থিতি এবং স্থানীয়ভাবে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতার হওয়া দুই নেতার সংশ্লিষ্টতা যাচাই করতেই পুলিশ তাদের হেফাজতে নিয়েছে।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আইনানুগ প্রক্রিয়ায় গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের রোববার টাঙ্গাইল আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব নয়। তবে মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দিক গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a comment