রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতার মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই গ্রেপ্তারের ঘটনাটি ঘটে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের সেকশন অফিসার পঙ্কজ কুমার, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের সহপরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ এবং উপপরিচালক আমিনুল হক। তাঁদের মধ্যে পঙ্কজ কুমার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন। অন্য দুইজনের রাজনৈতিক পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দুপুরের দিকে ঘটনাটি শুরু হয়, যখন ‘জুলাই বিপ্লব চেতনা বাস্তবায়ন কমিটি’ নামের একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পৃথক দুটি মামলার অভিযোগে এই তিন কর্মকর্তাকে তাঁদের নিজ নিজ দপ্তর থেকে বের করে এনে প্রশাসনিক ভবনের নিচে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান দপ্তরে উপস্থিত হলে শুরু হয় আলোচনা। সেখানে রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া থানায় প্রতিটি কর্মকর্তার নামে একটি করে মামলা রয়েছে বলে জানানো হয়। আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, তাঁদের মতিহার থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ এসে তাঁদের হেফাজতে নেয়।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মালেক জানান, “তাঁদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় মামলা ছিল। সেখানকার পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।” একই বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদও নিশ্চিত করে বলেন, “তিনজনের বিরুদ্ধেই একটি করে মামলা রয়েছে। মামলার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জুলাই মাসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যে গণ-অভ্যুত্থান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্র ধরে সংঘর্ষ হয়, সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠে। তখনই এসব হামলার ঘটনায় কিছু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এবং মামলার প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়। দীর্ঘ সময় পর আজ সেই মামলাগুলোর ভিত্তিতে এই কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, “কেউ যদি মামলার আসামি হয়, তাহলে পুলিশ প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে বাইরের কোনো সংগঠন এসে নিজের হাতে কাউকে আটক করবে, সেটি আমরা বরদাশত করব না। ভবিষ্যতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।”
গ্রেপ্তারকৃত কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা সহকর্মীদের কাছ থেকে আগে কখনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উঠেনি। তবে চলমান আন্দোলন ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা এবং অবস্থান এখন নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। প্রশাসনিক ভবনে আজকের ঘটনার ভিডিও এবং ছবি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং নানামুখী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছে, তবে এমন নজিরবিহীন গ্রেপ্তার এবং বাইরের লোকজন কর্তৃক সরাসরি দপ্তর থেকে কর্মকর্তা ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনের ভেতর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কতটা প্রভাব ফেলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশে।
Leave a comment