সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়, সাদা দাঁড়িওয়ালা একজন পুলিশ সদস্য জুলাই মাসে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়িত্ব পালনকালে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। পোষ্টটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং অনেকেই বিষয়টিকে সত্য ধরে নিয়ে শোক প্রকাশ করতে থাকেন।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছবিতে দেখা যাওয়া ব্যক্তি আসলে জীবিত এবং সুস্থ আছেন। তাঁর নাম জসিম উস্তাদ। তিনি একজন দায়িত্বশীল পুলিশ সদস্য হিসেবে কর্মরত আছেন এবং জুলাই মাসে কোনো সহিংস ঘটনার শিকার হননি। বরং সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটিতে দেখা যায়, তিনি মানবিক আচরণ প্রদর্শন করে একজন ভিক্ষুককে সাহায্য করছেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়াই তথ্য ছড়ানো কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এমন ভুল তথ্য শুধু জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না, বরং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বাহিনী সম্পর্কে ভুল বার্তাও ছড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক বা সামাজিক সংগঠনের অফিশিয়াল পেজ থেকে তথ্য প্রচার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব পেজের প্রচারিত বার্তা হাজার হাজার মানুষ বিশ্বাস করে গ্রহণ করে, এবং ভুল তথ্য হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
জসিম উস্তাদ নিজে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, এই ধরনের গুজব তাঁর মানসিক শান্তিতে প্রভাব ফেলেছে। তবে তিনি দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন এবং এ বিষয়ে প্রশাসনিকভাবে কোনো অভিযোগ বা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি।
ঘটনার পর ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো সংশোধনী বা দুঃখপ্রকাশ প্রকাশ করা হয়নি, যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, “বেঁচে থাকা মানুষকে মেরে ফেলা” কেবল গুজব নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক সহিংসতাও।
দেশে যখন গুজব রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে, তখন এমন দায়িত্বশীল সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ধরনের ভুল তথ্য ছড়ানো জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, পুলিশ বাহিনীর মতো একটি জাতীয় সেবাপ্রদায়ী প্রতিষ্ঠানের সদস্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করায় ক্ষোভও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে।
এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ডিজিটাল যুগে তথ্যের সত্যতা যাচাই ছাড়া কিছুই বিশ্বাস করা উচিত নয়, আর সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের উচিত প্রতিটি তথ্য যাচাই করে তবেই তা প্রকাশ করা—তা না হলে ভুলের দায় নিতে হয় সামষ্টিকভাবেই।
Leave a comment