Home জাতীয় জার্মানির শিল্পখাতে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব
জাতীয়

জার্মানির শিল্পখাতে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাব

Share
Share

জার্মানির শিল্প খাতে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে। কেবলমাত্র অটোমোবাইল শিল্পই নয়, বরং রাসায়নিক, যন্ত্র প্রকৌশল এবং অন্যান্য উচ্চ-প্রযুক্তি খাতেও চীনের শক্তিশালী অবস্থান জার্মান অর্থনীতির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।

জার্মানির অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক স্তম্ভ হলো এর শিল্প উৎপাদন খাত, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রায় ২০ শতাংশ অবদান রাখে এবং প্রায় ৫৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের শিল্প উন্নয়ন এবং বাজার সম্প্রসারণের ফলে জার্মানির এই খাত উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান রিফর্ম (সিইআর)-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জার্মানির শিল্প উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ কৌশল, যা চীনের উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পের প্রসারকে ত্বরান্বিত করছে।

প্রথমদিকে, চীনের শিল্প খাত প্রধানত নিম্ন-প্রযুক্তি নির্ভর ছিল, যা জার্মান অর্থনীতির জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করেনি। কিন্তু বর্তমানে, বেইজিংয়ের নীতিগুলো জার্মানির মূল শিল্প যেমন অটোমোবাইল, ক্লিন এনার্জি, এবং যন্ত্র প্রকৌশলের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে চীনের দ্রুত অগ্রগতি জার্মান গাড়ি নির্মাতাদের জন্য কঠিন বাস্তবতা তৈরি করেছে। ফল্কসভাগেন, মার্সিডিজ এবং বিএমডব্লিউ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের প্রতিযোগিতার মুখে ধীরগতির বিদ্যুৎচালিত গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। এই ধরণের পরিস্থিতি দেশে ছাঁটাই এবং কারখানা বন্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

জার্মানির যন্ত্র প্রকৌশল শিল্প চীনের আধিপত্যের ফলে ব্যাপক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক শিল্প যন্ত্রপাতির বাজারে সামগ্রিকভাবে স্থবিরতা দেখা গেলেও, চীনের বাজারে এই খাত ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তারা জার্মানিকে ছাড়িয়েও গেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জার্মানিকে তার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বজায় রাখতে উচ্চ প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবননির্ভর খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ওষুধ, জৈবপ্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর শিল্প খাতে এখনো জার্মানির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। তাই এসব খাতে মনোনিবেশ করাই হতে পারে চীনের প্রতিযোগিতার মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
অন্যদিকে, জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে ঝুঁকির মুখে থাকা শিল্পগুলোর সুরক্ষার ওপর বেশি মনোযোগ দেয়া হলে তা উদ্ভাবনের গতিকে শ্লথ করে দিতে পারে বলে অনেকে মত প্রকাশ করেছেন।

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

মিয়ানমারে স্কুলে জান্তা হামলা, শিশুসহ নিহত হয়েছে ২২ জন

সামরিক জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় মিয়ানমারের একটি স্কুলে ২০ জন শিশু ও দুই শিক্ষকসহ মোট ২২ জন নিহত হয়েছেন।  বিদ্রোহীদের সঙ্গে ভূমিকম্পের কারণে...

জাতিসংঘের সতর্কবার্তা, দুর্ভিক্ষের চূড়ান্ত সীমায় গাজা

ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা । জাতিসংঘ-সমর্থিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি অবরোধে বিপর্যস্ত গাজায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বর্তমানে অনাহারের...

Related Articles

পিএসএলে খেলবেন সাকিব!

দীর্ঘ বিরতির পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন সাকিব আল হাসান। পাকিস্তান সুপার লিগের...

মিশা সওদাগরকে মারধরের দাবি , ভিডিও ভাইরাল- আসল ঘটনা কী?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুধবার রাতে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন মানুষ...

বন্যা মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক ২৭০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বাংলাদেশকে। 

বাংলাদেশকে, ২০২৪ সালের আগস্টে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, কৃষি ও জীবিকায় পুনরুদ্ধার এবং...

ঢাকায় এবার যেসব স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে।

রাজধানীতে এবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন মিলিয়ে কোরবানির পশুর...