কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায় জামায়াতে ইসলামীর এক স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আনিসুর রহমান নামের ওই নেতা এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরোনো মামলায় সহায়তার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। অডিও ও ভিডিও ফাঁসের পর সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাবু মিয়া জানান, তিনি রাজীবপুর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে পার্টসের ব্যবসা করে আসছেন এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। তাঁর দাবি, আনিসুর রহমান তাঁকে মামলা ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। বিষয়টি প্রমাণ হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ১ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড এবং ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও।
অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, আনিসুর রহমান ফোনে বলেন, ‘বাবু শোনো, তোমার বিষয়ে অফিসার আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি বলেছি, ও আমার ছোট ভাই, বিষয়টা আমি দেখব। তুমি আমার সঙ্গে জরুরি দেখা করো। তোমার যদি একটা পশমের ক্ষতি হয়, আমি রাজীবপুরে দ্বিতীয় দিন আর মুখ দেখাব না।’ কথার মাঝখানে বাবু মিয়া কিছু বলতে গেলে আনিসুর রহমান ধমক দিয়ে বলেন, ‘তুমি বেশি কথা বলো কিসের জন্য? আমি তোমাকে যে কথা বলছি, এর থেকে বড় কোনো কথা আছে?’
পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাবু মিয়া আনিসুর রহমানের মোটরসাইকেলে চড়ে চলাফেরা করছেন। ভিডিওতে জামায়াত নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘তোমার বিষয়টা আমি দেখব, তুমি ৫০ হাজার টাকা রেডি করো।’ ব্যবসায়ী বাবু মিয়া বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁর দাবি, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তাঁর উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
তবে আনিসুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাবু মিয়ার সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘোরাঘুরির বিষয়টি সত্য হলেও তিনি কখনো টাকা চাননি। তাঁর ভাষায়, ‘এসব আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। ২০১৩ সালের একটি মামলায় তাঁকে আসামি বানানো হয়েছে, অথচ সে সময় তাঁর বয়সই হয়নি। তাই, তিনি কীভাবে মামলার আসামি হতে পারেন, সেটাই প্রশ্ন।’
এদিকে কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আবদুল মতিন ফারুকী বলেন, বিষয়টি তাঁদের নজরে এসেছে এবং এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় প্রশাসনের দিক থেকেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। রাজীবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি সদ্য সেখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর সময় এমন কোনো মামলা হয়নি। তবে যদি কেউ লিখিত অভিযোগ দেন, তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই অডিও ও ভিডিও ইতোমধ্যে রাজীবপুরসহ কুড়িগ্রাম জেলায় ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন। একই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানির অভিযোগে তীব্র নিন্দাও জানানো হচ্ছে।
Leave a comment