রাজধানীতে ক্রমবর্ধমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। কিন্তু এই আতঙ্কের পেছনে শুধু অপরাধীর সাহস বা পুলিশের উদাসীনতা নয়, বড় ভূমিকা রাখছে আইনি প্রক্রিয়ায় ফাঁকফোকর। মিরপুরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় ধরা পড়া ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় নিয়মিত মামলা না করে পুরোনো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আহত অবস্থায় পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পরও সে তথ্য আদালতকে জানানো হয়নি। আদালত এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, অধিকাংশ ছিনতাই মামলায় আসামিদের ঘটনাস্থলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার স্পষ্ট বর্ণনা থাকে না। এতে করে আদালতে জামিনের পথ সুগম হয়। অনেক সময় সন্দেহভাজন হিসেবে পূর্বের মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে মূল ঘটনাটি থেকে চোখ সরে যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে দস্যুতা ও ডাকাতির ঘটনায় ১৫১টি মামলা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৮২ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ৩২০টি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৮৫২ জনের মধ্যে অন্তত ১৫০ জন জামিন পেয়েছেন। এমন নজির আছে যে, জামিনে বেরিয়ে তারা আবারো একই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। যেমন গুলশানের এক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ওপর হামলায় অভিযুক্ত ইয়াসিন শিকদার জামিনের পর ফের অপরাধে যুক্ত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বিশ্লেষক ও পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, মামলা পরিচালনায় দুর্বলতা, প্রমাণ উপস্থাপনে গাফিলতি ও দুর্বল ধারা ব্যবহারের কারণেই অনেক অপরাধী সহজেই মুক্তি পাচ্ছে। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আসামিরা প্রভাব খাটিয়ে বা সংশ্লিষ্ট কাউকে ‘ম্যানেজ’ করে জামিন নিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশনা এসেছে সদর দপ্তর থেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ছিনতাইয়ের মতো ভয়াবহ অপরাধ আইনি প্রক্রিয়ার দুর্বলতার কারণে বাড়ছে। ফলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধ হুমকির মুখে পড়েছে।
সার্বিক চিত্র বলছে, শুধু পুলিশি অভিযান নয়, আদালতে মামলা পরিচালনার শক্তিশালী কাঠামো এবং নির্ভুল তদন্ত ছাড়া ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অপরাধীর যথাযথ বিচার ও সাজা নিশ্চিত করা জরুরি।
Leave a comment