
জাপানে চালের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এক বিতর্কিত মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারালেন দেশটির কৃষিমন্ত্রী তাকু ইতো। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি রসিকতা করে বলেন, তাঁকে কখনো চাল কিনতে হয় না, কারণ তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে প্রচুর চাল উপহার দেন। যদিও ইতো মন্তব্যটি হালকা রসিকতার ছলে করেছিলেন, তবে তা দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।
জাপানে বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে চালের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য জনগণের কাছে মর্মান্তিক হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে ব্যাপক জনরোষ এবং বিরোধী দলের অনাস্থার হুমকির মুখে তাকু ইতো পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
ইতো তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি একটু বেশিই বলে ফেলেছিলাম।’ তবে এই মন্তব্যের প্রভাব প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সংখ্যালঘু সরকারের জন্য বড় একটি ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই জনসমর্থনে ঘাটতিতে থাকা ইশিবার প্রশাসনের উপর এই ঘটনা আরও চাপ বাড়িয়েছে।
জাপানে চাল কেবল একটি প্রধান খাদ্য নয়, বরং এটি রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর একটি পণ্য। ইতিহাসে দেখা গেছে, চালের সংকট নিয়ে ১৯১৮ সালে সংঘটিত হয়েছিল বড় দাঙ্গা, যার জেরে তৎকালীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
বর্তমানে দেশটিতে চালের দাম বেড়ে ৬০ কেজিতে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ইয়েন হয়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। একদিকে এই মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে চাপ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে বহু বছর লোকসানে থাকা কৃষকেরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন।
জাপানে চলতি বছরে তীব্র গরমের কারণে ধানের উৎপাদন ও গুণগত মান—দুই–ই কমেছে। কৃষিবিদদের মতে, উৎপাদন কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ টনে। একই সঙ্গে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় কৃষকেরা অনেকেই ভিন্ন ধরনের ধান চাষের দিকে ঝুঁকেছেন, যা জাপানি ধানি মদ, রাইস ক্র্যাকার্স বা পশুখাদ্যে ব্যবহৃত হয়।
সরকার এ পরিস্থিতি সামাল দিতে আপৎকালীন গুদাম থেকে চাল ছাড়লেও বাজারদর কমেনি। এমনকি ২৫ বছর পর প্রথমবারের মতো জাপান দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চাল আমদানি শুরু করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। তবে সাধারণ ভোক্তারা বিদেশি চাল কিনতে অনাগ্রহী।
চালের বাজারে ভারসাম্য আনতে সরকারকে এখন এমন নীতিমালা নিতে হচ্ছে যাতে কৃষক ও ক্রেতা—দুই পক্ষই কিছুটা হলেও উপকৃত হন। প্রবীণ ভোটারদের সন্তুষ্ট রাখাও সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জাপানের ভোটব্যবস্থায় তাঁদের প্রভাব অনেক বেশি।
এই বাস্তবতায় চাল নিয়ে কোনো ধরনের রসিকতা রাজনৈতিক আত্মঘাতের শামিল হতে পারে—এটা মন্ত্রিত্ব হারিয়ে নিজের অভিজ্ঞতায় বুঝে গেছেন তাকু ইতো।
                                                                        
                                                                        
			            
			            
 
			        
 
			        
 
			        
 
			        
				            
				            
				            
Leave a comment