চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয়ে দুই যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার খরনা ইউনিয়নের মুজাফরাবাদ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দুই যুবক হলেন—কচুয়াই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাচা মিয়ার ছেলে মিনহাজ (২২) এবং খরনা ইউনিয়নে ভাড়া বাসায় থাকা রং মিস্ত্রি মিন্টুর ছেলে ফাহিম (১৬)। আহত ব্যক্তির নাম ইকবাল, যিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে একটি বালুবাহী পিকআপ ভ্যান চলাচলের সময় সেটি রাস্তায় ঝুলে থাকা পল্লীবিদ্যুতের তারে ধাক্কা লাগে। এতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে যায়। সেই সময় আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন তারের সংস্পর্শে আসলে ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয় এবং একজন আহত হন।
কচুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, “রাতের দিকে পিকআপ ভ্যানের গায়ে পল্লীবিদ্যুতের তার জড়িয়ে যায়। মুহূর্তেই তার ছিঁড়ে নিচে পড়ে যায় এবং দুজন যুবক বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। একজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “নিহত মিনহাজ স্থানীয় বাসিন্দা এবং ফাহিম এখানে তার পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকত। ফাহিম পেশায় রং মিস্ত্রির কাজ করত।” খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, “বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে দুই যুবক মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত আছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।”
তিনি আরও জানান, “ঘটনার সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে তদন্ত চলছে। পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের গাফিলতি বা অবহেলা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
খরনা ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, “এখানে অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তার খুব নিচে ঝুলে থাকে। বারবার অভিযোগ দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ তেমন ব্যবস্থা নেয়নি। আজ দুইজন যুবকের প্রাণ গেল—এই দুর্ঘটনা সম্পূর্ণ অবহেলার ফল।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, দ্রুত পুরনো তারগুলো পরিবর্তন করা হোক এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরিদর্শন চালানো হোক।” দুর্ঘটনার পর নিহতদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মিনহাজের বাবা বাচা মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ছেলেটা সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়েছিল, রাতে এমন খবর পাব ভাবিনি। তারে কীভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটল বুঝতে পারছি না।”
ফাহিমের মা জানান, “ও কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে মারা গেল। এত তাড়াতাড়ি চলে গেল সে।” চট্টগ্রামের পটিয়ার এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো—নিরাপত্তা অবহেলা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত তার দ্রুত মেরামত এবং স্থানীয়দের সচেতনতা বাড়ানোই এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। এদিকে নিহত দুই যুবকের মরদেহ পটিয়া থানার তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
Leave a comment