Home জাতীয় অপরাধ চট্টগ্রামে পাঁচ কারাগারে বিশৃঙ্খলা: ৭০০ পলাতক, ২০ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি
অপরাধ

চট্টগ্রামে পাঁচ কারাগারে বিশৃঙ্খলা: ৭০০ পলাতক, ২০ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি

Share
Share

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ কারাগার বিদ্রোহের পর পাঁচটি কারাগারে বিশৃঙ্খলা এবং পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গেছে। একদিকে ৭২১ পলাতক বন্দী, অন্যদিকে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার করা যায়নি। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে, বিশেষ করে যে বন্দীরা পালিয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, জঙ্গি সদস্য, ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা রয়েছেন। এর পাশাপাশি কয়েকটি বন্দী অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সহিংসতা ঘটিয়ে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

এ ঘটনা একদিকে যেমন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে বাংলাদেশের মেরিন সেক্টর ও জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত নিরাপত্তা সমস্যাগুলোর সামনে আসার পক্ষে ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রথম আলোকে কারা অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাতে কারাগারে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতিকারী হামলা চালিয়ে পাঁচটি প্রধান কারাগারের ভেতরে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২ হাজার ২৪০ বন্দীকে পালাতে বাধ্য করে। এই বিদ্রোহের পর, পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তার স্বার্থে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করে, তবে উক্ত বন্দীদের অধিকাংশই দেশে বা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ গ্রহণ করেছে।

এদিকে, বন্দীদের পালানোর পর থেকে তাদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও এখনও ৭২১ বন্দী পলাতক। এই বন্দীদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০৩ জন এবং জীবন্ত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িত, যেমন হত্যাকা-, ডাকাতি, মাদক, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন। বিশেষত ২০১৮ সালে শুরু হওয়া হত্যার ঘটনা এবং পরবর্তী সময়ে জাতীয় নিরাপত্তার অবনতি অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, কয়েকটি কারাগারে হামলাকারীরা ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে, যার মধ্যে ৯৪টি শটগান ও চায়নিজ রাইফেল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখনও ২০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়নি, যা উদ্বেগজনক কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এদিকে, শুধু বন্দীরা নয়, তাদের সাহায্যকারী বাহিনীও বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত অপরাধের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে যে, এসব বন্দী এবং লুট হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিধি এবং স্থানীয় আইন মেনে চলা প্রয়োজন যাতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল থাকে।

কারাগার সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্টের ঘটনায় ঢাকা, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, শেরপুর, নরসিংদী, কুষ্টিয়া এবং অন্যান্য কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। ফলে কিছু কারাগারে প্রায় ১০০ বন্দী মারা যায়, এবং প্রচুর জনসাধারণ ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, কিছু বন্দী এবং বাইরের অপরাধী গ্রুপ একযোগে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এছাড়াও, জঙ্গিদের নেতৃত্বে অনেক বন্দী আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠেছে, তারা মুক্তিপণ দাবি, হত্যা ও মাদক ব্যবসা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজ করছে। যেহেতু এই বন্দীরা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ছিল, তাদের পালানোর পর আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতি হতে পারে, বিশেষত যারা বাংলাদেশের বাইরে পালিয়েছে তাদের কারণেই।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, তারা এখনও বাকি ৭২১ বন্দীর whereabouts নিশ্চিত করতে পারেনি। অধিকাংশ পলাতক বন্দী বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের অবস্থান খুঁজে বের করতে সমস্যা হচ্ছে। বিশেষত সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা আরো জোরদার করার চেষ্টা চলছে, তবে এই পরিস্থিতিতে ২০টি আগ্নেয়াস্ত্রের অনুপস্থিতি দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পলাতক বন্দীদের খোঁজে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে এবং তাদের পুনরায় আটক করতে চেষ্টা করছে। সন্ত্রাসবিরোধী এবং অন্যান্য অপরাধী গ্রুপের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, যদিও পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে কিছুটা সময় লাগছে।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা অব্যাহত থাকার কারণে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে বিশেষভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, যাতে পুরো জাতি একত্রিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে বাধা দিতে পারে।

পরিস্থিতি যাতে আরও গুরুতর না হয়, এ জন্য প্রশাসনের সঙ্গে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে এবং দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখতে তাদের সাহায্য করতে হবে।

 

Share

Leave a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don't Miss

তাজিয়া মিছিলে বহন করা যাবে না যেসব জিনিস

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ঘোষণা করেছে যে, তাজিয়া মিছিলে দা, ছুরি, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো...

জাপানে রয়েছে দক্ষ কর্মীর চাহিদা: আসিফ নজরুল

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, বিপুল সংখ্যক দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে জাপানে। এ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের...

Related Articles

ঢাকার পূর্ব নয়াটোলায় উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ঢাকার মগবাজারের পূর্ব নয়াটোলা এলাকায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সূত্রে...

মোহাম্মদপুরের কবজিকাটা গ্রুপের ‘টুন্ডা বাবু’ কারাগারে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আলোচিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ‘কবজিকাটা গ্রুপ’-এর অন্যতম সদস্য ও কিশোর গ্যাং...

গাইবান্ধায় ভাতিজার হাতে খুন হয়েছে চাচা

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ভাই ও ভাতিজা ধারালো অস্ত্র দিয়ে...

নারায়ণগঞ্জে মোটরসাইকেলের জন্য বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করল ছেলে

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় মোটরসাইকেল কেনার জন্য টাকা চেয়ে না পেয়ে, হাতুড়ি দিয়ে...