চট্টগ্রামে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এক নারীকে লাথি মারার ঘটনায় আকাশ চৌধুরী নামের এক কর্মীকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহর সই করা এক প্রেস বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে আকাশ চৌধুরীকে জামায়াতের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলা হয়েছে, ২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট ও শাহবাগবিরোধী ঐক্যের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘটিত ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও ঘৃণ্য’ ঘটনার দায় জামায়াত নিতে রাজি নয়। সেখানে জামায়াতের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীকে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করা হয়।
ঘটনার দিন, দুপুরের পর জামালখান এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হঠাৎ হামলা চালানো হয়। সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হন। সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও, যেখানে দেখা যায়, একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেওয়া ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীদের দিকে হঠাৎ এক ব্যক্তি লাথি মারেন। প্রথমে এক তরুণকে এবং পরে এক নারীকে লক্ষ্য করে তিনি একইভাবে আক্রমণ করেন। পাশে থাকা একজন পুলিশ সদস্য তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কোনো প্রতিরোধ করেননি।
ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা ব্যক্তি আকাশ চৌধুরী বলে নিশ্চিত করেন ছাত্র জোটের নেতা-কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা দাবি করেন, তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক ক্যাডার এবং শিবির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সহিংস কর্মকাণ্ডে অতীতেও যুক্ত ছিলেন। এমনকি মুরাদপুরে একটি সুন্নি মুসলিম জমায়েতে তাঁর নেতৃত্বে হামলা চালানোর অভিযোগও আগে উঠেছিল।
বিতর্কিত এই ঘটনার পর জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সেদিনের অনভিপ্রেত ঘটনার দায় কেবলমাত্র সেখানে উপস্থিত দায়ী ব্যক্তিদের ওপরই বর্তায়। আকাশ চৌধুরী জামায়াতের অনুমতি ব্যতীত সেখানে গিয়েছিলেন এবং যা করেছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। জামায়াতে ইসলামী কখনোই এমন অনিয়ন্ত্রিত আচরণ বা সহিংস কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেয় না।’’
তবে বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে নানা মতানৈক্যের ইঙ্গিত মিলেছে। আকাশ চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হলেও জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের অন্য কোনো দায়িত্বশীল নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর কর্মকাণ্ডের দায় স্বীকার বা ব্যাখ্যা দেননি। জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনেকে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা উঠেছে, কারণ ভিডিওতে স্পষ্টভাবে দেখা গেলেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্য কোনো হস্তক্ষেপ করেননি।
নারীকে প্রকাশ্যে লাথি মারার এই ঘটনাকে দেশের রাজনীতিতে নারী বিদ্বেষ ও সহিংস রাজনীতির উদ্বেগজনক চিত্র হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকেও উঠেছে।
Leave a comment