ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক চারদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও উত্তেজনা ছড়িয়েছে গুজরাট সীমান্তে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে এক পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের গুজরাট রাজ্যের বানাসকাঁঠা জেলায়, যেখানে বিএসএফ দাবি করেছে—সীমান্তে একটি সন্দেহজনক ব্যক্তিকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। তাকে থামার নির্দেশ দেওয়া হলেও সে অগ্রসর হতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে গুলি করে ঘটনাস্থলেই ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়।
ভারতীয় বিএসএফ শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, “সীমান্ত বেড়ার দিকে একজন সন্দেহভাজন এগিয়ে আসছিল। চ্যালেঞ্জ করা সত্ত্বেও তিনি থামেননি, ফলে বাধ্য হয়ে গুলি চালানো হয়।” তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা ভারতীয় বিবৃতিকে অস্পষ্ট ও অপ্রমাণিত বলে দাবি করেছেন। ইসলামাবাদ থেকে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “নিহত ব্যক্তির পরিচয় ভারত প্রকাশ করেনি এবং কীভাবে তিনি এত ভেতরে ঢুকলেন—তাও প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা এই হত্যাকাণ্ড ও নিহত ব্যক্তির পরিচয় তদন্ত করছি।”
গুজরাট ও রাজস্থান রাজ্য দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্তজুড়ে মাদক চোরাচালানের জন্য পরিচিত। সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ থেকে মাদক প্রবেশের অভিযোগ বহুবার উঠেছে। কয়েক বছরে এ অঞ্চলে মিলিয়ন ডলার মূল্যের মাদক জব্দ এবং একাধিক পাকিস্তানি নাগরিক গ্রেপ্তার কিংবা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, দুই সপ্তাহ আগে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দিল্লি ইসলামাবাদকে দোষারোপ করে এবং পাল্টা হামলা চালায়। পাকিস্তান পাল্টা জবাবে ভারতের সামরিক স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। চার দিনব্যাপী ওই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৭০ জন নিহত হয়। পরে একটি অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় দুই দেশ।
ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে যেকোনো জঙ্গি হামলাকে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। অন্যদিকে পাকিস্তান বরাবরই কাশ্মীর হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং উল্টো অভিযোগ করেছে যে, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলে ভারতের পৃষ্ঠপোষকতায় সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এই ঘটনাপ্রবাহ নতুন করে সীমান্ত উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষত, সীমান্তে একজন নাগরিকের গুলিতে মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক প্রতিবাদ এবং পাল্টা বিবৃতি আসতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে এশিয়ার এই উত্তপ্ত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা যায়।
Leave a comment